বাম কংগেস জোট গত নির্বাচনগুলিতে তেমন কোনও দাগ কাটতে পারেনি রাজ্যে। সিপিআইএম ও কংগ্রেস- দুটি দলই বিধানসভায় শূন্য হয়ে গেছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হোক এমনটা চাইছেন না বাম সমর্থকরা। অভিযোগ, দলীয় নেতারা তো আর সমর্থক-কর্মীদের গুরুত্ব দেন না। জোট বিরোধী কোনও কথাও তারা শুনতেও চান না।
ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে কি বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে দুই দলের মধ্যে দড়ি টানাটানি চলছে। রাজ্যে কংগ্রেশ শক্তিশালী মুর্শিদাবাদ, মালদা ও উত্তর দিনাজপুরে। আর এই জেলাগুলিকে বিশেষ নজরে রেখেছে বাম শিবির। কারণ, এই তিনটি জেলায় বাম শিবিরের সংগঠন এখনো কিছুটা শক্তপোক্ত। শূন্য দশা কাটাতে মরিয়া রাজ্যের দুই পূর্বতন শাসকদল জোট সূত্র খুঁজতে ব্যাস্ত।
জানা যাচ্ছে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা বজায় রাখতে ইচ্ছুক বামফ্রন্টের প্রধান দল সিপিআইএম। তবে তারা চাইছে এই বিষয়ে কংগ্রেসই প্রথমে উদ্যোগ নিক। সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেসকেই নিতে হবে যে তারা বামফ্রন্টের সঙ্গে ২০২৬ সালের নির্বাচনের জন্য আসন সমঝোতা বজায় রাখতে চায় কি না।
দলটির এক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের জুন মাসে নদিয়ার কলিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থীর জন্য বামফ্রন্ট সমর্থন চেয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী বামফ্রন্ট কোনো প্রার্থী দেয়নি। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ ইউনিটের একাংশ নিয়মিত আমাদের কাছে বার্তা পাঠায় যে তারা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন, ২০২৪ লোকসভা ভোট এবং ২০২৫ সালের কলিগঞ্জ উপনির্বাচনে যেভাবে বোঝাপড়া হয়েছিল, তা বজায় রাখতে চায়। এখন সিদ্ধান্ত কংগ্রেসকেই নিতে হবে যে তারা ২০২৬ সালের জন্য কী করতে চায়। কংগ্রেসের হয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।”
তবে প্রদেশ কংগ্রেস এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। এই বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, “জাতীয় স্তর বা রাজ্য স্তর, যেখানেই হোক না কেন, জোট বা আসন সমঝোতার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটিকেই নিতে হয়। এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো নির্দেশ আসেনি। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। তবে প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী জোটে রাজি।
প্রশ্ন উঠছে, সিপিআইএম এত আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও কেন তারা চাইছে যে কংগ্রেসই প্রথমে আলোচনা শুরু করুক? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি তাদের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। কারন, মাদুরাইয়ে অনুষ্ঠিত সিপিআইএম-এর ২৪তম পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী দিনে দলটি স্বাধীন রাজনৈতিক লাইন অনুসরণ করবে, যেখানে নির্বাচনী বোঝাপড়ার ওপর কম জোর দেওয়া হয়েছে। এই রাজনৈতিক প্রস্তাব মাথায় রেখেই সিপিআইএম রাজ্য কমিটি কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে প্রথমে উদ্যোগ নিতে পারছে না। সেই কারণেই তারা চাইছে কংগ্রেসই আগে এগিয়ে আসুক।
উল্লেখ্য, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের মধ্যে এই নির্বাচনভিত্তিক বোঝাপড়া শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উভয় দলের মধ্যে কোনো আসন সমঝোতা হয়নি। তবে ২০২১ সালে দুটি দলই জোট করেছিল।