ওয়াকফ আইন (Murshidabad waqf) প্রত্যাহারের দাবিকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ অশান্তি। সম্প্রতি এই অশান্তি এতটাই ভয়াবহ রূপ নেয় যে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন, আহত হয়েছেন অনেকে এবং বহু পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত (Murshidabad waqf) হয়ে উঠেছে যে, জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে নামাতে হয় বিএসএফ ও আধাসেনা। এরই মধ্যে, আক্রান্ত পরিবারগুলির তরফে কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের হয়েছে মামলা। তাঁরা চাইছেন এই ঘটনায় জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)-র মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত।
হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ ইতিমধ্যেই এই মামলা গ্রহণ করেছেন এবং জানা যাচ্ছে, আগামীকাল হতে পারে মামলার শুনানি। মামলাকারীদের অভিযোগ, ওয়াকফ আইনের নামে এক শ্রেণির মানুষ এলাকাজুড়ে সন্ত্রাস ও গুণ্ডামি চালাচ্ছেন। বাড়িতে বোমা মারা হয়েছে, প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে, এমনকি পুলিশকেও বিষয়টি জানানো হলেও কোনও প্রতিকার মেলেনি। এসপিকে ই-মেল করেও কোনও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ সহ একাধিক এলাকা। সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ধারাবাহিকভাবে হামলা, লুটপাট ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বহু মহিলা ও শিশু ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন মালদহ জেলার বৈষ্ণবনগরের বিভিন্ন স্কুলে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত এই বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য কোনও স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি।
অন্যদিকে, এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে ওয়াকফ আইন। অনেকেই বলছেন, এই আইনকে (Murshidabad waqf) ব্যবহার করে এক শ্রেণির দুর্নীতিপরায়ণ লোকজন মসজিদ, কবরস্থান বা ধর্মীয় স্থানের নামে সাধারণ মানুষের সম্পত্তি দখল করছে। গ্রামীণ এলাকাগুলিতে এই সমস্যা আরও প্রকট। জমি দখল, ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা— এসব ঘটনা যেন নিয়মিত হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতির প্রতিবাদেই (Murshidabad waqf) বহু মানুষ রাস্তায় নামেন, এবং সেখান থেকেই অশান্তির সূত্রপাত হয়।
মুর্শিদাবাদ, ঐতিহাসিকভাবে শান্তিপূর্ণ জেলা হলেও, গত কিছুদিন ধরেই সেখানে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। প্রশাসনের গাফিলতি, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব – সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে।
NIA তদন্তের দাবি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এই ঘটনায় শুধুমাত্র স্থানীয় সন্ত্রাস বা জমি বিবাদের অভিযোগ নয়, বরং অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এর পেছনে থাকতে পারে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি করাও হতে পারে এই অশান্তির অন্যতম উদ্দেশ্য।
বর্তমানে আদালতের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা রাজ্য। যদি এনআইএ তদন্তের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে প্রকৃত সত্য সামনে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। সেই সঙ্গে, সাধারণ মানুষও কিছুটা হলেও সুবিচারের আশায় বুক বাঁধতে পারবেন।