রাজনীতির মঞ্চে অনেক সময় ঘটনাপ্রবাহ এমন এক মোড় নেয়, যা সাধারণ মানুষের কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দেয়। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঠিক এমনই এক নাটকীয় পরিবর্তনের সাক্ষী থাকল বর্ধমান-১ ব্লকের হাটুদেওয়ান এলাকা। স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী বলে পরিচিত কাকলী তা গুপ্তর নামে তৈরি করা দলীয় কার্যালয় (Tmc) থেকে হঠাৎ করেই নাম মুছে ফেলা হয়েছে। ফলে নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে পুরনো ক্ষোভ, আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং প্রভাব বিস্তারের লড়াই।
কার্যালয়ের নামফলক ঘিরে বিতর্ক
কাকলী তা গুপ্ত দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় এলাকায় সক্রিয় রাজনীতি করছেন। তিনি নিজের উদ্যোগে হাটুদেওয়ানে একটি দলীয় কার্যালয় তৈরি করেছিলেন, যেখানে তাঁর নাম স্পষ্টভাবে লেখা ছিল। নামফলক লাগানোর পর স্থানীয় স্তরে সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় ফিসফাস। দলের একটি বড় অংশের দাবি ছিল, এই নামফলক দলীয় ঐক্যকে ভেঙে দেওয়ার মতো কাজ। অভিযোগ উঠতে থাকে—ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তারের স্বার্থেই কাকলী নিজেকে সামনে আনার চেষ্টা করেছেন।
২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নাম মুছে ফেলা
এই চাপানউতোরের মাঝেই মাত্র ২৪ ঘণ্টার মাথায় পাল্টে গেল দৃশ্য। হঠাৎই দেখা গেল, কার্যালয়ের গায়ে কাকলী তা গুপ্তর নাম নেই। এই পরিবর্তন চোখে পড়তেই এলাকায় জল্পনা তুঙ্গে। সমর্থকরা হতবাক হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, উপরমহল থেকে নির্দেশ আসার ফলেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী গোষ্ঠীর মন্তব্য, “এটা আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের জয়। দল কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।”
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব
বর্ধমান জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। একদিকে জেলা নেতৃত্বের প্রতি অনুগত অংশ, অন্যদিকে নিজেদের শক্তি বাড়াতে মরিয়া স্থানীয় নেতারা। এই টানাপোড়েনই বারবার প্রকট হয়ে উঠছে। কাকলী তা গুপ্তর নামফলক মুছে ফেলার ঘটনায় তা ফের একবার প্রকাশ্যে চলে এল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দ্বন্দ্ব যদি এভাবেই চলতে থাকে তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে দলের ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, “আমরা চাই কাজ হোক। কার নাম লেখা আছে বা নেই, সেটা নিয়ে আমাদের বিশেষ মাথাব্যথা নেই। কিন্তু যদি এই দ্বন্দ্বের কারণে উন্নয়ন থমকে যায়, তাহলে ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষেরই।” আবার কিছু মানুষ মনে করছেন, এই ভোলবদল প্রমাণ করছে যে দলের ভেতরে ভাঙন গভীর।
রাজনৈতিক বার্তা
বিশ্লেষকদের মতে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নামফলক মুছে ফেলার ঘটনা একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—দলীয়(Tmc) ঐক্যের স্বার্থে কাউকে আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া হবে না। তবে একই সঙ্গে এই ঘটনাই ইঙ্গিত করছে, দলের জেলা স্তরে নেতৃত্বের মধ্যে সমঝোতার অভাব রয়েছে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন ও অন্যান্য রাজনৈতিক লড়াই। তার আগে এই ধরনের দ্বন্দ্ব দলকে চাপে ফেলতে পারে বলেই আশঙ্কা।