সিঙ্গুরে কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ফের রাজনৈতিক তাপমাত্রা চড়ল। বুধবার বিজেপির পক্ষ থেকে সিঙ্গুরে একটি কৃষক আন্দোলনের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আন্দোলনের প্রধান বক্তা ছিলেন রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সেদিন দুপুরে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary) কলকাতা থেকে সড়কপথে সিঙ্গুরের উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু যাত্রাপথেই ঘটল উত্তেজনাকর ঘটনা। ডানকুনি টোল প্লাজার কাছে পৌঁছতেই কয়েকজন যুবক ও স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী দলনেতার গাড়ির সামনে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, কালো পতাকা হাতে থাকা বিক্ষোভকারীরা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikary) বিরুদ্ধে স্লোগানও দিতে থাকেন। পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়ে শুভেন্দুর গাড়ি টোল প্লাজা পার হয়। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুহূর্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
সিঙ্গুরে পৌঁছনোর পর মঞ্চে উঠে শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary) এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস পরিকল্পিতভাবে বিজেপির আন্দোলন ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “আজ ডানকুনিতে কালো পতাকা দেখানো হয়েছে আমাকে ভয় দেখানোর জন্য। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী ভয় পায় না। আমি মানুষের অধিকারের লড়াই চালিয়ে যাব।” বক্তব্যের সময়ে তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল তীব্র ও আক্রমণাত্মক।
শুভেন্দু আরও দাবি করেন, রাজ্যের কৃষকেরা আজও তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত। চাষিরা তাঁদের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, সেচ ও চাষের অন্যান্য সুযোগসুবিধাতেও নানা অনিয়ম চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, কৃষকদের কল্যাণের নামে রাজ্য সরকার শুধু রাজনৈতিক প্রচার চালাচ্ছে, বাস্তবে কোনও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
বিজেপির ডাকা এই কৃষক আন্দোলনে সেদিন কয়েকশো কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। স্লোগানে, ব্যানার-পোস্টারে এবং বক্তৃতায় একাধিকবার রাজ্য সরকারের কৃষিনীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়। শুভেন্দু ছাড়াও বিজেপির অন্যান্য নেতারা বলেন, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, মেদিনীপুর—সব জায়গাতেই কৃষকেরা নানাভাবে প্রতারিত হয়েছেন। তাঁদের দাবি, শাসকদলের ‘কৃষকপ্রেম’ আসলে ভোটের সময়ের মুখোশ মাত্র।
অন্যদিকে, শাসকদলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কালো পতাকা দেখানোর ঘটনা বিজেপির নাটক। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary) রাজ্যের উন্নয়ন আটকানোর চেষ্টা করছেন। কৃষকদের নামে রাজনীতি করে তিনি শুধুমাত্র বিভাজনের রাজনীতি চালাচ্ছেন। ডানকুনির ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই বলেও দাবি করেছে শাসক শিবির।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিঙ্গুর বরাবরই বাংলার রাজনীতিতে একটি প্রতীকী জায়গা দখল করে আছে। সেখানকার জমি আন্দোলনই একসময় রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিয়েছিল। এখন সেই সিঙ্গুরে ফের আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিজেপি রাজনীতির ময়দানে একপ্রকার বার্তা দিতে চাইছে—কৃষক ইস্যুতে তারা কোনওভাবেই পিছিয়ে নেই। অন্যদিকে তৃণমূলও চেষ্টা করছে এই আন্দোলনকে গুরুত্বহীন করে দেখাতে। ফলে, এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাকযুদ্ধ ও ময়দানি লড়াই আরও তীব্র হবে, তা বলাই বাহুল্য।
দিনের শেষে, ডানকুনির কালো পতাকা দেখানোর ঘটনা এবং সিঙ্গুরের মঞ্চে শুভেন্দুর জবাব—দু’টোই রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। একদিকে বিজেপি দাবি করছে, তারা কৃষকের পাশে, অন্যদিকে তৃণমূল বলছে, এসবই রাজনৈতিক নাটক। তবে যে যাই বলুক, এই ঘটনাই প্রমাণ করে কৃষক ইস্যু নিয়ে আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তাপ আরও বাড়বে।