বিজেপির নির্বাচনী জয়: দিল্লিতে কেন এই পরিবর্তন?

দিল্লির নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর, বিজেপির কাছে এটি একটি বড় জয়। ২৭ বছর পর দিল্লিতে ফিরে আসলো বিজেপি। নির্বাচনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিজেপি ৭০ আসনের মধ্যে…

দিল্লির নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর, বিজেপির কাছে এটি একটি বড় জয়। ২৭ বছর পর দিল্লিতে ফিরে আসলো বিজেপি। নির্বাচনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিজেপি ৭০ আসনের মধ্যে ৪৭টি আসন জিতে নিয়েছে। অপরদিকে, ১০ বছর ধরে দিল্লিতে শাসন করা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি পেয়েছে মাত্র ২৩টি আসন। এই জয়টি বিজেপির জন্য একেবারে নতুন দিশা এবং এটি হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের পরবর্তী বড় জয় হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

১. আপ সরকারের বিরোধিতা

   

২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আপ ২০১৩ সালে দিল্লিতে শাসন প্রতিষ্ঠা করে এবং ২০১৫ সাল থেকে শাসন চলতে থাকে। তবে কেজরিওয়াল ও অতীশী সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে বিরোধিতা বাড়ে। বিশেষত, কিছু বিধায়ক যারা ভোটারদের কাছে অপ্রাপ্য ও দূরত্ব অনুভূত হচ্ছিল, তাদের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হয়। এরই মধ্যে আপ কিছু প্রার্থী পরিবর্তন করলেও, তা তেমন কার্যকরী হয়নি।

২. বাজেট ও মধ্যবিত্তের প্রতি নজর

কেন্দ্রের বাজেট ব্যবস্থা দিল্লির জনগণের মধ্যে এক নতুন আশা জাগিয়েছে। বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য বড় আয়করের থেকে বড় রিলিফ ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে বিজেপি এক নতুন পথ ধরেছিল, যেখানে তারা মধ্যবিত্তকে আরও বেশি গুরুত্ব দেয় এবং আপ তাদের দিকে নজর দেয়নি।

৩. আপের প্রকল্পের অব্যাহত সুবিধা

আপের সরকারের সময় নানা রকম উপকারিতা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বিজেপি এবার সেসব প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। যেমন মহিলাদের জন্য ২৫০০ টাকা মাসিক আর্থিক সাহায্য, ৫০০ টাকায় এলপিজি সিলিন্ডার প্রদানসহ নানা সুবিধা ঘোষণা করা হয়।

৪. ডাবল ইঞ্জিন সরকার

আপ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ ছিল অনেক, বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে বিরোধিতার কারণে। এবার বিজেপি দিল্লির ভোটারদের ডাবল ইঞ্জিন সরকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয় তৈরি হবে।

৫. রাহুল গান্ধীর আক্রমণ

বিজেপির জয়ে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি কেজরিওয়ালকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন এবং তাকে একযোগীভাবে বিজেপির সাথে তুলনা করেছেন, যার ফলে কেজরিওয়ালের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

৬. দুর্নীতির অভিযোগ

আপ সরকারের শাসনকাল গড়ে উঠেছিল “দুর্নীতিমুক্ত” স্লোগান নিয়ে, কিন্তু বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ এ দলের বিরুদ্ধে জমা হয়েছে। বিশেষ করে মদ নীতি কেলেঙ্কারি এবং কেজরিওয়ালের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে আসে।

৭. যমুনা পরিষ্কার এবং বায়ু দূষণ

বিজেপি নির্বাচন প্রচারে দাবি করেছে, তারা যমুনা নদী পরিষ্কার করবে এবং দিল্লির বায়ু দূষণ কমাবে। আপ সরকারের সময় বায়ু দূষণ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং কেজরিওয়ালের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

৮. প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রচার

প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিজেপির প্রধান প্রচারক। তিনি কেজরিওয়ালকে কটাক্ষ করেছেন এবং তাকে “ফারজিওয়াল” বলে আক্রমণ করেন। তাঁর এই আক্রমণ অনেক ভোটারের মধ্যে সমর্থন জোগায়।

৯. দিল্লির জন্য বিশেষ বার্তা

বিজেপি এবার দিল্লির জনগণের জন্য একটি বিশেষ বার্তা নিয়ে আসেন। হিন্দুত্ব নয়, বরং শাসনব্যবস্থা ও মধ্যবিত্তের সমস্যাগুলি প্রধান ফোকাস ছিল বিজেপির প্রচারে।

১০. কংগ্রেস বনাম আপ

বিজেপির জয়ের পিছনে কংগ্রেসের ভূমিকা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কংগ্রেস এবং আপ আলাদাভাবে নির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কংগ্রেস নেতারা কেজরিওয়ালকে আক্রমণ করেছেন, যা আপের নির্বাচনী অবস্থানকে দুর্বল করে তোলে।

এভাবে, বিজেপির এই জয় শুধু দিল্লির রাজনীতিতে নয়, দেশের রাজনীতিতে নতুন একটি দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যা আগামীদিনে আরও বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।