নয়াদিল্লি ৪ অক্টোবর: বিহার বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতীয় জনতা পার্টি (Assembly Election) নির্বাচন কমিশনের কাছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলেছে। শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫, বিজেপি জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচন এক বা দুই ধাপে সম্পন্ন করা হোক এবং ভোটকেন্দ্রে বোরখা পরা মহিলা ভোটারদের পরিচয় ভোটার আইডি কার্ডের ছবির সঙ্গে যথাযথভাবে যাচাই করা হোক। এই দাবি রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এটিকে বিজেপির “রাজনৈতিক চাল” হিসেবে অভিহিত করে তীব্র নিন্দা করেছে।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ভোটের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। হিজাব পরা মহিলা ভোটারদের পরিচয় যাচাইয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে কোনো প্রক্সি ভোটিং বা জালিয়াতি না হয়।” তিনি আরও বলেন, “এক বা দুই ধাপে নির্বাচন করলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কার্যকর হবে এবং ভোটারদের সুবিধা হবে।” বিজেপির দাবি, বিহারের মতো জনবহুল রাজ্যে একাধিক ধাপে নির্বাচন প্রক্রিয়া জটিল করে তোলে এবং প্রশাসনিক ত্রুটির সম্ভাবনা বাড়ায়।
দুর্গা বিসর্জনে রক্তাক্ত চাকরধরপুর! ছুরিকাঘাতে আহত ৭ যুবক, আশঙ্কাজনক ১
এই দাবির পিছনে বিজেপির যুক্তি হলো, অতীতে কিছু ক্ষেত্রে হিজাব পরা ভোটারদের পরিচয় যাচাইয়ে শৈথিল্য দেখা গেছে, যা ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিজেপির বিহার ইউনিটের প্রধান সম্রাট চৌধুরী বলেন, “আমরা কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নই। আমাদের উদ্দেশ্য ভোট প্রক্রিয়াকে জালিয়াতিমুক্ত করা। মহিলা কর্মীদের দিয়ে বোরকা পরা ভোটারদের পরিচয় যাচাই করা যেতে পারে, যাতে কোনো গোপনীয়তা লঙ্ঘন না হয়।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই পদক্ষেপ ভোটের পবিত্রতা রক্ষার জন্য।
অন্যদিকে, আরজেডি এই দাবিকে “ধর্মীয় মেরুকরণের চাল” বলে কটাক্ষ করেছে। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেন, “বিজেপি নির্বাচনের আগে সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়। হিজাব পরা মহিলাদের টার্গেট করা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে হয়রানির চেষ্টা। ভোটার আইডি থাকা সত্ত্বেও এমন দাবি কেন? এটি বিজেপির হতাশার প্রমাণ।” আরজেডির মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নিয়মে ইতিমধ্যে ভোটারদের পরিচয় যাচাইয়ের ব্যবস্থা আছে। বিজেপি শুধু মুসলিম সম্প্রদায়কে অপমান করতে চায়।”
নির্বাচন কমিশন এখনও এই দাবির উপর আনুষ্ঠানিক সাড়া দেয়নি। তবে, সূত্র জানায়, কমিশন বিহার নির্বাচনের জন্য তিন ধাপে ভোটের পরিকল্পনা করছে, যা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে পারে। ভোটারদের পরিচয় যাচাইয়ে কঠোরতার বিষয়ে কমিশন বলেছে, “সব ভোটারের পরিচয় যাচাইয়ে বিশেষ মহিলা কর্মী নিয়োগ করা হয়। আমরা নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করব।” বিহারে ৭.৮ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৩.৭ কোটি মহিলা ভোটার রয়েছেন, এবং বোরকা পরা ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের।
এই বিতর্ক বিহারের নির্বাচনী মাঠে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিজেপি তাদের জোটসঙ্গী জেডি(ইউ)-এর সঙ্গে মিলে নির্বাচনে শক্তিশালী প্রচার চালাচ্ছে, যেখানে তারা “সুশাসন” এবং “নিরাপত্তা”র উপর জোর দিচ্ছে। অন্যদিকে, আরজেডি-কংগ্রেস জোট এই দাবিকে “সাম্প্রদায়িক কৌশল” বলে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। বিহারের মতো রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল রাজ্যে এই ইস্যু ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।