নন্দীগ্রাম বিধানসভার কালীচরণপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি নির্বাচনে গেরুয়া ঝড়

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক রণাঙ্গন নন্দীগ্রামে (Nandigram) আরেকটি উল্লেখযোগ্য নির্বাচনী জয়ের সাক্ষী হল রাজ্য। নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের কালীচরণপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নির্বাচনে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের চোখ…

Nandigram BJP wins

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক রণাঙ্গন নন্দীগ্রামে (Nandigram) আরেকটি উল্লেখযোগ্য নির্বাচনী জয়ের সাক্ষী হল রাজ্য। নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের কালীচরণপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নির্বাচনে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের চোখ রাঙানি এবং তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে উপেক্ষা করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সমর্থিত প্রার্থীরা ১২টি আসনের সবকটিতেই বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে।

এই নির্বাচন ২০২৫ সালের (Nandigram) জুন মাসে অনুষ্ঠিত হয়, এবং ফলাফল ঘোষণার পর বিজেপি শিবিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। এই জয় নন্দীগ্রামে বিজেপির শক্তিশালী উপস্থিতি এবং স্থানীয় জনগণের সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

   

নন্দীগ্রাম (Nandigram) বিধানসভা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী জয়ী হন।

এই ঘটনা নন্দীগ্রামকে (Nandigram) রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে। কালীচরণপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নির্বাচনও এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই নির্বাচনে মোট ১২টি আসনের জন্য ভোটগ্রহণ হয়, এবং বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়।

নির্বাচনের দিন সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। পুলিশের কঠোর নজরদারি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো, এবং সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অব্যাহত থাকে। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায়, বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা প্রতিটি আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন।

এই জয় বিজেপির (Nandigram) জন্য একটি বড় রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে নন্দীগ্রামের মতো একটি রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল এলাকায়। বিজেপির নেতারা দাবি করেছেন যে এই ফলাফল স্থানীয় জনগণের তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনের প্রতি অসন্তোষ এবং বিজেপির প্রতি সমর্থনের প্রতিফলন। বিজেপির একজন নেতা, সুপর্ণা পড়্যা, বলেন, “আমরা মনোনয়নের সময় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে এখানে বিরোধী শূন্য করব। নন্দীগ্রাম আমাদের শক্ত ঘাঁটি, এবং এই জয় প্রমাণ করে যে মানুষ দুর্নীতিবাজদের আর সহ্য করতে চায় না।”

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা (Nandigram) এই নির্বাচনকে অরাজনৈতিক বলে উল্লেখ করে ফলাফলের গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করেছেন। তৃণমূল নেতা বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, “এটি একটি অরাজনৈতিক নির্বাচন, যেখানে কোনও দলীয় প্রতীক ব্যবহৃত হয়নি। তাছাড়া, এই সমবায় সমিতির অধীনস্থ বুথগুলি ২০২১ সাল থেকে বিজেপির দখলে রয়েছে।” তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ফলাফল তৃণমূলের জন্য একটি বড় ধাক্কা, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে।

নন্দীগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল (Nandigram) কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ছিল। ২০০৭ সালে এখানে কৃষি জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিকভাবে উত্থান লাভ করেন। কিন্তু ২০২১ সালে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি এই কেন্দ্রে জয়লাভ করে, যা তৃণমূলের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল।

তারপর থেকে নন্দীগ্রামে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। সম্প্রতি, ২০২৫ সালের জুন মাসে নন্দীগ্রামে বিজেপি থেকে ৫০ জনেরও বেশি নেতা-কর্মী তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেও, এই সমবায় নির্বাচনে বিজেপির জয় তাদের শক্তি অটুট থাকার ইঙ্গিত দেয়।

Advertisements

নির্বাচনের দিন কালীচরণপুরে (Nandigram) কড়া পুলিশি নিরাপত্তা বজায় রাখা হয়। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের চারপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়, যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। তৃণমূল এবং বিজেপি উভয় পক্ষই অতীতে একে অপরের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের নিয়ে এসে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছে। তবে, এবারের নির্বাচনে পুলিশের কঠোর নজরদারির কারণে কোনও বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। ফলাফল ঘোষণার পর বিজেপি কর্মীরা গেরুয়া আবির মেখে জয় উদযাপন করেন।

প্রি-কোয়াটার ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে পরবর্তী ক্লাব বিশ্বকাপে জায়গা পেল ৪ ক্লাব

এই নির্বাচনের ফলাফল নন্দীগ্রামে বিজেপির শক্তি এবং শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাবের প্রমাণ দেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই জয় আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির জন্য মনোবল বাড়ানোর কাজ করবে।

অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এই পরাজয় নন্দীগ্রামে তাদের অবস্থান পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করে তুলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরে গিয়ে দলীয় নেতাদের নন্দীগ্রাম পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু এই ফলাফল তৃণমূলের পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

কালীচরণপুর (Nandigram) কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির নির্বাচনে বিজেপির এই বিপুল জয় নন্দীগ্রামের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি শুধু একটি সমবায় নির্বাচনের জয় নয়, বরং স্থানীয় জনগণের মধ্যে বিজেপির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার ইঙ্গিত।

আগামী দিনে নন্দীগ্রামে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই আরও তীব্র হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই জয় বিজেপির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা আগামী নির্বাচনের জন্য তাদের কৌশলকে আরও শক্তিশালী করবে।

 

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News