বিজেপি বিধায়কের বিস্ফোরক অভিযোগে ফুঁসছে মতুয়া মহল

মতুয়া মহলে ফের একবার চরম অশান্তির ছবি ধরা পড়ল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধেই এবার সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন বিজেপি (BJP) বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর। দীর্ঘদিন…

BJP MLA's explosive allegations are making the Matua community furious

মতুয়া মহলে ফের একবার চরম অশান্তির ছবি ধরা পড়ল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধেই এবার সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন বিজেপি (BJP) বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর। দীর্ঘদিন ধরেই মতুয়া সমাজকে ঘিরে নানা অভিযোগ ও অসন্তোষ ঘনীভূত হচ্ছিল। কিন্তু এবারের বিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে ‘মতুয়া কার্ড তৈরি’ ও ‘ধর্মের শংসাপত্র’ দেওয়ার বিষয়। এই দু’টি বিষয় নিয়ে বিজেপির অন্দরে যে তীব্র ক্ষোভ জমছিল, তা প্রকাশ্যে এনে দিল সুব্রতের তোপ।

কী নিয়ে শুরু বিবাদ?

   

মতুয়া সমাজের মধ্যে বহু বছর ধরেই নাগরিকত্ব প্রশ্ন ও ধর্মীয় পরিচয় সংক্রান্ত নানা বিতর্ক চলছে। কেন্দ্রের সিএএ আইন এবং তার বাস্তবায়ন নিয়ে বহু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, তা কার্যকর হয়নি এখনও পর্যন্ত। এর মধ্যেই মতুয়া কার্ড তৈরি এবং ধর্মের শংসাপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ, এই কাজগুলির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নিয়ন্ত্রণাধীন সংগঠনের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই দাবি করছেন, এর ফলে সাধারণ মতুয়া পরিবারের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলছেন, কারা এই শংসাপত্র পাচ্ছেন আর কারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এই নিয়েই বিজেপির (BJP) ভেতরে মতবিরোধ চরমে উঠেছে।

সুব্রত ঠাকুরের আক্রমণ

বিজেপি (BJP) বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন— “মতুয়া সমাজের নামে কার্ড বানানো হচ্ছে, শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনও কাজের সম্পর্ক নেই। এটা নিছক ভোটের রাজনীতি।” তাঁর দাবি, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সুব্রতের মতে, মতুয়া সমাজকে প্রতিশ্রুত নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা এখনও দেওয়া হয়নি। অথচ নতুন নতুন কাগজপত্র তৈরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।

শান্তনুর পাল্টা যুক্তি

যদিও শান্তনু ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এসব পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ। তাঁরা জানান, মতুয়া সমাজের ঐক্য ধরে রাখতেই এই ধরনের প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মতে, এই কাজের মাধ্যমে সমাজের ঐতিহ্য রক্ষা করা হচ্ছে এবং আগামী প্রজন্মের কাছে মতুয়া পরিচয় স্পষ্ট করে তোলাই আসল লক্ষ্য।

Advertisements

নির্বাচনের আগে অস্বস্তি বিজেপিতে

বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। এই সময় বিজেপির(BJP) ভেতরে এমন ফাটল প্রকাশ্যে চলে আসা যে গেরুয়া শিবিরকে প্রবল অস্বস্তিতে ফেলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০২১ সালে বিজেপি যখন বাংলায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছিল, তখন মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক ছিল অন্যতম প্রধান ভরসা। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া এবং দক্ষিণবঙ্গের আরও বেশ কয়েকটি জেলায় মতুয়া ভোট ব্যালান্স টিপে দিয়েছিল। কিন্তু এবারে যদি মতুয়া মহল বিভক্ত হয়, তবে তা সরাসরি বিজেপির আসন সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের কৌশল

তৃণমূল কংগ্রেস বরাবরই মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের দিকে কড়া নজর রেখেছে। তাদের দাবি, বিজেপি শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কাজের কাজ কিছুই করেনি। সিএএ আইন কার্যকর না হওয়াই তার বড় প্রমাণ। বিজেপির অন্দরের এই দ্বন্দ্বকে হাতিয়ার করেই তৃণমূল আগামী নির্বাচনে মতুয়া সমাজকে আরও কাছে টানার চেষ্টা করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।

মতুয়ার আঙিনায় ক্ষোভের সুর

মতুয়া সমাজের সাধারণ মানুষ এখন দ্বিধাগ্রস্ত। একাংশ বলছেন, বিজেপি (BJP) বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রক্ষা করছে না। অন্যদিকে, অনেকে আবার বিশ্বাস করেন, কেন্দ্রের হাতে এখনও সময় আছে এবং শেষ পর্যন্ত মতুয়া সমাজের দাবি পূরণ করা হবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুব্রত ঠাকুরের মতো একজন জনপ্রতিনিধি যদি প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ তোলেন, তবে তা নিঃসন্দেহে সমাজের ভিতরে অসন্তোষ আরও বাড়াবে।