৬৪ শতাংশ মুসলিম ভোটার, লক্ষাধিক ভোটে জয়ী বিজেপি

চব্বিশের উপনির্বাচনে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)।। মুসলিম প্রধান কুন্দরকি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী রামভীর সিং এক লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে…

Lone Hindu Ramveer Thakur secures BJP win in SP's bastion Kundarki

চব্বিশের উপনির্বাচনে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)।। মুসলিম প্রধান কুন্দরকি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী রামভীর সিং এক লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। ৩৫ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো এই মুসলিম প্রাধান্যপূর্ণ কেন্দ্রে পদ্মের জয় হল।

কুন্দরকি বিধানসভা কেন্দ্রটি মুসলিম ভোটারদের প্রাধান্য রয়েছে, যেখানে প্রায় ৬৪ শতাংশ ভোটার মুসলিম। দীর্ঘ তিন দশক ধরে এখানে বিধায়ক ছিলেন মুসলিম প্রার্থীরা। কখনও মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) তো কখনও অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি (সপা) প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। তবে, এবার বিজেপি ইতিহাস তৈরি করল, যা রাজনীতির প্রতি দেশবাসীর নজর আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

   

নতুন ইতিহাসের সূচনা
২০২৪-এর উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী রামভীর সিং ১,৪৪,৭৯১ ভোটে জয়ী হয়েছেন। এটি কুন্দরকি কেন্দ্রে গত তিন দশকের সবচেয়ে বড় জয়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, এখানে মোট ১২ জন প্রার্থী লড়াই করেছেন, কিন্তু সবাই মুসলিম প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও বিজেপির রামভীর সিং একাই এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন।

মোট ভোটের মধ্যে ৭৬ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজেপি একটি বৃহৎ অংশের সমর্থন জিতেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন সমাজবাদী পার্টির মহম্মদ রিজওয়ান, যিনি ২৫ হাজার ৫৮০ ভোট পেয়েছেন। তবে তাঁর ভোটের হার ছিল মাত্র ১১.৫ শতাংশ।

কুন্দরকির ঐতিহ্য ও বিজেপির কৌশল
কুন্দরকি বিধানসভা কেন্দ্রটি মুসলিম প্রধান হলেও, বিজেপির এই ঐতিহাসিক জয়ের পিছনে একাধিক কৌশল কাজ করেছে। বিজেপি অতীতে মুসলিম ভোটারদের কাছে যেভাবে তাদের রাজনৈতিক পদক্ষেপ তুলে ধরেছে, তা তাদের ভোট ব্যাংক তৈরি করতে সহায়ক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নমূলক কর্মসূচি এবং বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ, যেমন নারী শশক্তিকরণ ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নতি, প্রভাব ফেলেছে এই নির্বাচনে।

বিজেপি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে তারা নিজেকে শুধু একটি হিন্দু দল হিসেবে নয়, বরং একটি জাতীয় দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে, যার কাছে দেশের প্রতিটি সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য কর্মসূচি রয়েছে।

এছাড়াও, কুন্দরকির মুসলিম ভোটারদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদির উন্নয়নমূলক কর্মসূচির প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে পিএম কিষান, উজ্জ্বালা যোজনার মতো প্রকল্পগুলি। এসব কারণেই বিজেপির প্রার্থী এই বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে। যদিও অনেকেই বলছেন, মুসলিম ভোট ভাগ হওয়ায় কুন্দরকি আসনে পদ্ম ফুটেছে।

বিজেপির অভ্যন্তরীণ ঐতিহাসিক পালা
কুন্দরকির এই নির্বাচনের ফলাফলে বিজেপির মধ্যে একটি নতুন আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। দলটি বুঝতে পেরেছে যে, তাদের নির্বাচনী প্রচারণার মধ্যে যে উন্নয়নমূলক দিকগুলি তুলে ধরা হয়েছে, তা দেশজুড়ে সমর্থন পেয়েছে। বিশেষত, বিজেপির নির্বাচনী দল পিসি-এমএম-এর (পাবলিক কনসালটেশন, মার্কেটিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) শাখা একাধিক সামাজিক মহল থেকে সমর্থন এনে বিজেপির ভোট বৃদ্ধি করেছে।

বিজেপি তার প্রচারে ধর্মীয় বিভাজন এবং সামাজিক নিরপেক্ষতা ধারণাকে পরিহার করে মূলত সামাজিক ন্যায় এবং উন্নয়নকে কেন্দ্র করে কাজ করেছে, যা দেশবাসীর কাছে এক অনন্য দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করেছে।

এবার কি পরিবর্তন হবে কুন্দরকির রাজনীতিতে?
কুন্দরকি বিধানসভা কেন্দ্রের এই নির্বাচনী ফলাফল শুধুমাত্র বিজেপির জন্য একটি বড় জয় নয়, বরং রাজ্যের রাজনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলবে। বিশেষভাবে, কুন্দরকির মতো মুসলিম প্রাধান্যযুক্ত কেন্দ্রে বিজেপির জয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

এখন, কুন্দরকি কেন্দ্রের বিজেপি জয়কে একটি উদাহরণ হিসেবে ধরে নিয়ে বিজেপি তাদের রাজনৈতিক কৌশলকে গোটা উত্তর ভারতের মুসলিম প্রধান অঞ্চলে সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এই বিপুল জয় বিজেপির জন্য এক নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ খুলে দিতে পারে, যা তার ভবিষ্যত নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে।

কুন্দরকি উপনির্বাচনে বিজেপির এই ঐতিহাসিক জয় দেশবাসীকে এক নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ দিয়েছে। মুসলিম প্রধান কেন্দ্রে পদ্মের শাসন, বিজেপির শক্তিশালী রাজনৈতিক কৌশল এবং উন্নয়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গির জয়ের প্রতিফলন। এর মাধ্যমে বিজেপি আগামী দিনের রাজনীতিতে আরও শক্তিশালী অবস্থান নিতে সক্ষম হতে পারে, বিশেষত মুসলিম ভোটারদের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে।