বিরোধী দুর্গে ভোট চুরির অভিযোগ তুলে পাল্টা ব্যুমেরাং খেল বিজেপি

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোট। একাধিক বিরোধী নেতা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, এই জোট কেবল লোকসভা নির্বাচনের জন্যই তৈরি…

BJP Alleges Voter Fraud in 6 Opposition Strongholds — Did Anurag Thakur End Up Validating Rahul Gandhi’s ‘Vote Chori’ Claim?

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোট। একাধিক বিরোধী নেতা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, এই জোট কেবল লোকসভা নির্বাচনের জন্যই তৈরি হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভাঙন আরও স্পষ্ট হয়েছে — অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি তো আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছেড়েই দিয়েছে। কিন্তু প্রায় এক বছর পরে, অন্তত একটি ইস্যুতে বিরোধীরা আবারও একসঙ্গে দেখা গেল — তা হল ‘ভোট চুরি’ অভিযোগ।

সম্প্রতি রাহুল গান্ধী পাঁচটি উপায়ে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে বলেন, নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে বিজেপি (BJP) ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে, যাতে শাসক দলকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করা যায়। এই বক্তব্যকে বিরোধী শিবিরের প্রায় সব নেতা সমর্থন জানিয়েছেন, যার ফলে বিজেপির ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।

   

এই চাপ মোকাবিলায় বুধবার বিজেপি (BJP) সাংসদ অনুরাগ ঠাকুরকে সামনে এনে পাল্টা প্রচার শুরু করে গেরুয়া শিবির। অনুরাগ একটি ৭০ স্লাইডের প্রেজেন্টেশন দিয়ে জানান, তাঁদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ‘পাঁচ উপায়ে অনুপ্রবেশকারী ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি’ হচ্ছে। তাঁর দাবি অনুযায়ী, এই পাঁচটি উপায় হল —
১. ভুয়ো ভোটার তৈরি,
২. ভুয়ো ঠিকানা ব্যবহার,
৩. ভুয়ো পরিবার গঠন,
৪. ভোটারের বয়সের হেরফের,
৫. গণহারে নতুন নাম ভোটার তালিকায় যোগ।

এখানেই থামেননি অনুরাগ ঠাকুর। তিনি অভিযোগ করেন, এই কারচুপি বিরোধী শিবিরের শক্ত ঘাঁটিতেও ঘটছে। তাঁর দাবি, রায়বেরিলি, ওয়েনাড়, ডায়মন্ড হারবার, কনৌজ, মৈনপুরী এবং কোলাথুর — এই ছয়টি কেন্দ্রে জাল ভোটারের সংখ্যা উদ্বেগজনক। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আসনগুলি থেকে জয়ী হয়েছিলেন যথাক্রমে রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিম্পল যাদব, অখিলেশ যাদব এবং এম কে স্ট্যালিন।

অনুরাগের প্রেজেন্টেশন অনুযায়ী, রায়বেরিলিতেই সন্দেহভাজন ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষেরও বেশি। শুধুমাত্র রাহুল গান্ধীর কেন্দ্রে ১৯,৫১২ জন ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এর পাশাপাশি ৭১,৯৭৭ জনের ঠিকানা ভুয়ো, এবং ৯২,৭৪৭ জনের নাম গণহারে ভোটার তালিকায় তোলা হয়েছে। আরও অভিযোগ, ৫২,০০০-রও বেশি ভুয়ো জন্ম সনদ ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় নাম তোলা হয়েছে, যার পেছনে ভুয়ো ঠিকানার অবলম্বন রয়েছে।

Advertisements

বিরোধী শিবির অবশ্য এই অভিযোগকে রাজনৈতিক চাল বলে আখ্যা দিয়েছে। তাঁদের মতে, বিজেপি রাহুল গান্ধীর ভোট চুরির অভিযোগকে ঢাকতে গিয়ে উল্টে সেটিকেই আরও প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, অনুরাগ ঠাকুরের প্রেজেন্টেশন কার্যত রাহুল গান্ধীর অভিযোগের প্রতিধ্বনি, কারণ উভয়ের বক্তব্যেই ভোটার তালিকায় কারচুপির স্বীকারোক্তি রয়েছে — শুধু দোষারোপের দিক আলাদা।

এই ইস্যু এখন রাজনৈতিক মহলে নতুন তরঙ্গ তুলেছে। একদিকে বিরোধীরা বলছে, বিজেপি অনিচ্ছাকৃতভাবে ‘সেমসাইড গোল’ করেছে, অন্যদিকে বিজেপি দাবি করছে, বিরোধীদের ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি ও রক্ষায় জালিয়াতির প্রমাণ হাতেনাতে ধরা পড়েছে।

এখন নজর রয়েছে নির্বাচন কমিশনের ওপর, তারা এই দুই পক্ষের দাবিদাওয়া নিয়ে কী অবস্থান নেয়। পাশাপাশি, এই বিতর্ক আগামী নির্বাচনী রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। একথা নিশ্চিত, ‘ভোট চুরি’ ইস্যুতে বিজেপি ও বিরোধী শিবিরের এই টক্কর সহজে থামছে না।