বাঙালিদের উপর নির্যাতন এবার শুধু পূর্বভারতের সীমায় (Mahua Moitra) আটকে থাকল না। ওড়িশা, দিল্লির পর এবার ছত্তিশগড়েও বাঙালি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে চরম দমনপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সোমবার রাতে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ একটি ভিডিও পোস্ট করে জানান, ছত্তিশগড়ে কাজ করতে যাওয়া ৯ জন বাঙালি শ্রমিককে বেআইনিভাবে আটক করেছে স্থানীয় পুলিশ। তাঁর দাবি, ওই শ্রমিকদের সমস্ত বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।Mahua Moitra
মহুয়ার অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৯ জন শ্রমিক ছত্তিশগড়ের কোন্দগাঁও জেলার একটি স্কুলে নির্মাণ শ্রমিকের (রাজমিস্ত্রি) কাজ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু গত শনিবার আচমকা তাঁদের বাসস্থান থেকে তুলে নিয়ে যায় সেখানকার পুলিশ। এরপর থেকে তাঁদের কোনো খোঁজ নেই। তাঁদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে, ফলে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও সম্ভব হয়নি।
সাংসদ মহুয়া এই গোটা ঘটনাকে আখ্যা দিয়েছেন “সরকারি মদতপুষ্ট অপহরণ”। তাঁর বক্তব্য, “ডিটেনশন অর্ডার কপি নেই, কোনো শুনানি হয়নি, আইনজীবীর সাহায্যও দেওয়া হয়নি। এইভাবে আটকে রাখা হচ্ছে আমাদের রাজ্যের শ্রমিকদের। এটা অপহরণ ছাড়া আর কিছু নয়।” ভিডিওতে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকারও তীব্র সমালোচনা করেন এবং বাঙালিদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
স্থানীয় পুলিশ সুপারের তরফে মহুয়াকে জানানো হয়েছে, ধৃত শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আদিবাসী মহিলাদের ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সাংসদের দাবি, অভিযোগ থাকলেও কোনও প্রাথমিক তদন্ত বা সঠিক আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। বরং, এনকাউন্টার স্টাইলে তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং একেবারে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করেছে। মহুয়া বলেন, “এই প্রথম নয়। বারবার বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের বাংলাদেশি বলে টার্গেট করা হচ্ছে। ওড়িশায়, দিল্লির জয়হিন্দ কলোনিতে বাঙালি পরিবারগুলিকে উৎখাত করা হয়েছে। বাংলা ভাষা বললেই মানুষকে হেনস্থা করা হচ্ছে। এমনকি জলের সংযোগ, বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হচ্ছে।”
দিন কয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স-এ পোস্ট করে জানিয়েছিলেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের নাগরিক অধিকার কেমনভাবে পদদলিত হচ্ছে, তার প্রতিবাদে তিনি পথে নামবেন। বাঙালিদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন তিনি। আর ঠিক সেই সময়েই সামনে এল ছত্তিশগড়ের এই ঘটনা।
মহুয়ার অভিযোগ, “বাঙালিদের টার্গেট করে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে। বিজেপি সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাভাষীদের উপর নজরদারি চালাচ্ছে। একে তো কাজের সন্ধানে অন্য রাজ্যে যাওয়া শ্রমিকদের দুর্দশা, তার উপর এইভাবে বেআইনি আটক— এটা চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন।”
তৃণমূল নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার ও মানবাধিকার কমিশনের নজরে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন। মহুয়া মৈত্র জানিয়েছেন, তিনি সংসদে এই বিষয়টি তুলবেন এবং ছত্তিশগড় প্রশাসনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ দাবি করবেন।
বর্তমানে ৯ জন শ্রমিক কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছেন— তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। একদিকে কাজের খোঁজে হাজার কিলোমিটার দূরে যাওয়া, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া— এই ঘটনা ফের একবার তুলে ধরল অভিবাসী বাঙালি শ্রমিকদের দুরবস্থার বাস্তব চিত্র।