যৌথ বাহিনীর অভিযানে বন্দুক যুদ্ধে নিহত মাওবাদী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাসভরাজ (Basavaraju)। সংগঠনটির পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হতে চলেছেন এ নিয়ে আলোচনা চলছে। মাওবাদীরাও এ বিষয়ে নীরব। তবে একাধিক জাতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর, বাসভরাজের পদে যোগ্যতর কাউকে বেছে নেওয়ার সাংগঠনিক প্রক্রিয়া চলছে। বিবিসি জানিয়েছে, কেন্দ্র সরকারের কড়া ভূমিকায় ভারতীয় মাওবাদী সংগঠন এই মুহূর্তে প্রবল নেতৃত্ব সংকটে। তাদের অস্তিত্ব ধরে রাখা কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে নকশালপন্থীদের অন্যতম নেতা প্রয়াত চারু মজুমদারের মৃত্যু দিবস পালনে থাকছে কড়া গোয়েন্দা নজর।
উল্লেখ্য, সত্তর দশকে গোপনে থাকাকালীন চারু মজুমদার ধরা পড়েছিলেন কলকাতায়। পুলিশ হেফাজতে ১৯৭২ সালের ২৮ জুলাই নকশাল আন্দোলনের প্রধান নেতা মারা যান। তার মৃত্যু সন্দেহজনক বলে দাবি করেন নকশালপন্থীরা। দিনটি ‘শহিদ’ দিবস বলে তারা পালন করেন। জানা গেছে, সোমবার (২৮ জুলাই) প্রয়াত চারু মজুমদারের মৃত্যু দিবস পালন অনুষ্ঠানে এবার মাওবাদী ঘনিষ্ঠদের উপস্থিতি থাকার সম্ভাবনা ধরে নিয়েই বিশেষ নজরদারি থাকছে।
মাওবাদী ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট বিশ্লেষণ করছে গোয়েন্দা বিভাগ। এই ধরণের পোস্টে লেখা হয়েছে, ”ভারতজুড়ে চলমান নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথে লাখো লাখো শহীদদের স্মরণে বিপ্লবী ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে শহীদ দিবস পালনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।”
বিপ্লবী ছাত্র ফ্রন্ট (RSF) সংগঠনটি মাওবাদীদের শিক্ষার্থী শাখা বলে চিহ্নিত। তাদের তরফে জানানো হয়, সোমবার কলকাতা কলেজ স্ট্রিটে প্রয়াত চারু মজুমদারের মৃত্যু দিবস পালিত হবে। এই সমাবেশে সম্প্রতি নিহত নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসভরাজের কয়েকজন ‘কাছের লোক’-এর ছদ্মবেশে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না কলকাতা পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ। ফলে ওই সমাবেশে থাকছে অদৃশ্য নজরদারি।
গত ২১ মে ছত্তিসগড়ে যৌথ বাহিনীর প্রবল আক্রমণে নিহত হন মাওবাদী সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা বাসভরাজ। তার মৃত্যুর পর সিপিআই (মাওবাদী) দলের অবস্থান বিশ্লেষণ করেছেন ছত্তিসগড়ের প্রাক্তন ডিজিপি আর কে ভিজ। তিনি বলেন, এখন, বাসভরাজের মৃত্যুর পর, একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছ কে তার স্থলাভিষিক্ত হবে?
ভিজের বিশ্লেষণ, সিপিআই (মাওয়াদী) শুধমাত্র সশস্ত্র উগ্রপন্থী সংগঠন নয়। এটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল, যার বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামো রয়েছে গ্রাম পর্যায়ের সেল থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্তরের পলিটব্যুরো পর্যন্ত। সংগঠনে সবার ওপরের পদ সাধারণ সম্পাদক। যিনি যেন একটি ছায়া সরকারের ছায়া প্রধানমন্ত্রীর মতো কাজ করেন।
ভিজ বলেন, মাওয়াদীদের সশস্ত্র শাখ পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি (PLGA) এবং ইউনাইটেড ফ্রন্ট মিলিতভাবে কাজ করার জন্য গঠিত। কয়েক বছর অন্তর কেন্দ্রীয় কমিটি আন্দোলনের দিক নির্ধারণের জন্য বৈঠক করে। সর্বশেষ এমন একটি বৈঠক হয়েছিল ২০০৭ সালে, যেখানে ঝাড়খণ্ড এবং বিহারকে মূল এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং গেরিলা যুদ্ধনীতি থেকে মোবাইল যুদ্ধনীতিতে রূপান্তরের কৌশল নির্ধারিত হয় যা আরও চটপটে ও আক্রমণাত্মক ধরনের সশস্ত্র সংগ্রাম।
বিবিসি জানিয়েছে বন্দুক যুদ্ধের সময় বাসভরাজ তার দেহরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন। তাদের মৃত্যুর পর ছত্তিসগড় ও ঝাড়খণ্ডে থাকা মাওবাদী সংঠনের আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন। নিহতদের পরিবারের তরফে আয়েজিত শেষকৃত্য অনুষ্ঠানেও কড়া গোয়েন্দা নজর ছিল। জানা যাচ্ছে আপাত ছন্নছাড়া মাওবাদীরা তাদের মূল কর্মকাণ্ডের এলাকা অন্ধ্র্রপ্রদেশ, ছত্তিসগড় ও ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে সরে এসে মহারষ্ট্রের জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চল যেমন বেছে নিচ্ছে তেমনই পশ্চিমবঙ্গের দিকেও পুনরায় তাদের অভিমূখ।
এক দশক আগে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট জমানায় প্রথমে জনযুদ্ধ গোষ্ঠী ও পরে মাওবাদীদের নাশকতায় বারবার রক্তাক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সেই হামলাগুলির মূল নেতা ছিলেন কোটেশ্বর রা়ও ওরফে কিষেণজি। তিনি প্রকাশ্যেই গামছা দিয়ে মুখ ঢেকে সংবাদ মা়ধ্যমে বলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে চান। পরে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কিছু পরেই কিষেণজিকে পশ্চিমবঙ্গেই নিহত হন।