এবার মারের বদলা মার হবে, শাহি সভার পর অর্জুনের হুংকার

রবিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো রাজ্য বিজেপির একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মিসভা। সভার মূল আকর্ষণ ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে…

Arjun Singh Roars

রবিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো রাজ্য বিজেপির একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মিসভা। সভার মূল আকর্ষণ ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপির কৌশল নির্ধারণ ও কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতেই এই সভার আয়োজন। আর সভার পরেই হুঙ্কার দিলেন বারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ ও বিজেপি নেতা অর্জুন সিং (Arjun Singh)— “এবার মারের বদলা মার হবে।”

অমিত শাহ এদিন কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণে বার্তা দেন, এবার আর শুধুই মার খাওয়ার সময় নয়— পাল্টা মার দেওয়ার সময় এসেছে। এই বার্তাকে সামনে রেখেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অর্জুন সিং বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দু’টো স্পষ্ট ন্যারেটিভ দিয়েছেন— এক, মার খাওয়া আর চলবে না, এবার মারতে হবে। দুই, হার্ডকোর হিন্দুত্বের রাজনীতি।”

   

তিনি আরও বলেন, “এই কথাগুলো আমরা অনেকদিন ধরেই বলছি। বাংলার রাজনীতিতে যাঁরা পরিবর্তন এনেছেন, তাঁরা সবাই হার্ডকোর বিরোধী শক্তি থেকে এসেছেন। যেমন, সিপিএম জমানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রবল বিরোধী মুখ, যাঁর নেতৃত্বেই পরিবর্তন এসেছিল। এবার সেই রাস্তায় বিজেপি। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট— যে মার খাবে, তাকেই এবার জবাব দিতে হবে। মারের বদলা মারেই দিতে হবে।”

অর্জুনের হুঁশিয়ারি এখানেই থেমে থাকেনি। তিনি বলেন, “বাংলায় ৮০ শতাংশ হিন্দু আছে। যদি তারা সংঘবদ্ধভাবে বিজেপিকে ভোট দেয়, তাহলে ২০২৬-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর রাজ্যে থাকার জায়গা থাকবে না। আমরা হার্ডকোর হিন্দুত্বের ওপর জোর দেবো। এটা নিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মন্তব্য শুধু উস্কানিমূলক নয়, এর মাধ্যমে বিজেপি রাজ্যে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট করল। একদিকে দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করা, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সতর্কবার্তা দেওয়া— এই দুই উদ্দেশ্যেই কথাগুলো বলা হয়েছে।

Advertisements

অর্জুন সিং আরও বলেন, “ভোট বাড়াতে হলে আমাদের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করতে হবে। বহু কর্মী আছেন, যাঁরা বিজেপিকে ভালোবাসেন, কিন্তু কাজ করতে ভয় পান। সেই ভয় দূর করতে হবে। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজনে যা যা করতে হয়, তাই করতে হবে। এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই।”

অমিত শাহের এই সফর ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির সূচনাও বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। ২০২১ সালে ২০০-র বেশি আসনের লক্ষ্য নিয়ে বাংলায় ঝাঁপিয়েও বিজেপিকে থামতে হয়েছিল মাত্র ৭৭টিতে। এরপর দলীয় অভ্যন্তরে ভাঙন, নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব, এবং মাঠে কার্যকর কর্মসূচির অভাবে বিজেপি ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে, এই সভা ও অর্জুনের মন্তব্যকে বিজেপির ‘রিবুট’ প্রচেষ্টার সূচনা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে তৃণমূল কংগ্রেস এখনও এই মন্তব্যের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে সূত্রের খবর, অর্জুনের এই “মার”-কেন্দ্রিক হুমকি নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সব মিলিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে এই ধরনের হুঙ্কার যে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়াবে, তা বলাই বাহুল্য। এখন দেখার বিষয়, বিজেপির এই ‘মার-কেন্দ্রিক’ নতুন কৌশল কতটা কার্যকর হয় বাংলার ভোটবাক্সে।