পুলিশকে গালি বিতর্কে অনুব্রতের পাশে দাঁড়ালেন অর্জুন সিং

পুলিশকে গালিগালাজ করে বিতর্কে জড়ানো অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়ালেন বারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ এবং বিজেপি নেতা অর্জুন সিং (Arjun Singh)। রবিবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত…

Arjun Singh Backs Anubrata Mandal

পুলিশকে গালিগালাজ করে বিতর্কে জড়ানো অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়ালেন বারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ এবং বিজেপি নেতা অর্জুন সিং (Arjun Singh)। রবিবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিজেপির কর্মিসভায় অংশগ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সভা শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অর্জুন সিং বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। একসময়ের সতীর্থ অনুব্রতর পাশে দাঁড়ান অর্জুন।

তিনি বলেন, “অনুব্রত মণ্ডল একদম ঠিক করেছেন। এই পুলিশ এটাই ডিজার্ভ করে। এটাই ওদের একমাত্র ওষুধ। অনুব্রত মণ্ডল যা করেছেন, তারপরেও এই পুলিশের মেরুদণ্ড দাঁড়াবে না। এরা পয়সার জন্য সব কিছু বিক্রি করতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুণ্ডা আর পুলিশের যে সমীকরণ তৈরি করেছেন, তা পৃথিবীর কোথাও নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য ইন্দোনেশিয়া। তারপরেই আছে পশ্চিমবঙ্গ। এখানে পুলিশ আর গুণ্ডা মিলে চিটিংবাজি করে।”

   

অর্জুনের এই মন্তব্য নতুন করে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়েছে। একদিকে যখন তৃণমূলের অন্দরেই অনুব্রতের আচরণ নিয়ে অস্বস্তি, তখন বিজেপি নেতার এই মন্তব্য অনেক প্রশ্ন তুলছে।

ঘটনার সূত্রপাত একটি অডিও ক্লিপকে কেন্দ্র করে, যেখানে শোনা যাচ্ছে তৃণমূলের বীরভূম জেলার প্রাক্তন সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে ফোনে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করছেন। ‘অনুব্রত মণ্ডল বলছি’—এই পরিচয় দিয়েই শুরু হয় তার গালাগালির পর্ব। সেই অডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে তৃণমূল নেতৃত্বের অন্দরেও চাপের সৃষ্টি হয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে তৃণমূল নেতৃত্ব অনুব্রতকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দেয়। সেই মোতাবেক শুক্রবার দুপুরে প্রথমে লিখিতভাবে পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি দেন অনুব্রত। পরে একটি ভিডিও বার্তাও প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, ভাইরাল হওয়া অডিওতে যাঁর গলা শোনা যাচ্ছে, সেটা আমারই। আমি বরাবর পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্কে থেকেছি। কিন্তু ওই দিন ব্যক্তিগত কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। আমার এমন কথা বলা উচিত হয়নি। আমি দুঃখিত।”

Advertisements

তবে ক্ষমা চাইলেও মামলা ঠেকেনি। বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, অনুব্রতের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-র অধীনে চারটি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা দিয়েছেন, হুমকি দিয়েছেন ও মানহানিকর মন্তব্য করেছেন।

প্রয়োগ হওয়া ধারাগুলি হল—

  • BNS ২২৪: সরকারি কাজে বাধা এবং কর্তব্যরত কর্মীকে হুমকি
  • BNS ১৩২: সরকারি কর্মচারীকে হেনস্থা
  • BNS ৭৫: শ্লীলতাহানি ও মানহানি
  • BNS ৩৫১: হুমকি প্রদানএর মধ্যে অন্তত একটি ধারা জামিন অযোগ্য, ফলে আইনি দিক থেকে বিষয়টি গুরুতর।

পুলিশ ইতিমধ্যেই বোলপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে অনুব্রতের হাতে মামলার নোটিস তুলে দিয়েছে। পাশাপাশি, টানা দুই দিন—শনিবার ও রবিবার—পুলিশি তলব সত্ত্বেও থানায় হাজিরা দেননি অনুব্রত। এতে করে প্রশ্ন উঠেছে, দল কি এবার তাঁর প্রতি আরও কঠোর অবস্থান নিতে চলেছে?
প্রসঙ্গত, গরু পাচার মামলায় নাম জড়ানোর পর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল। দীর্ঘ জেল হেফাজতের পর ২০২৩ সালে তিনি জামিন পান। তখন তৃণমূল জানায়, “আইন আইনের পথে চলবে।” কিন্তু জামিনের পরেও একাধিক বিতর্কে জড়াতে থাকেন অনুব্রত।

এখন দেখার বিষয়, পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করার পথে এগোয় কি না। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তাঁর আইনজীবীদের মাধ্যমেই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ জানানো হবে। অন্যদিকে, তৃণমূলও বিষয়টি নজরে রাখছে বলে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন—এই বিতর্কে অনুব্রতের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপি নেতা অর্জুন সিং কী বার্তা দিতে চাইলেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিষয়টি রাজ্যের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্যকে আরও টালমাটাল করে তুলতে পারে।