কলকাতা, ২৩ সেপ্টেম্বর: অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বিহার বিধানসভা নির্বাচনের (Bihar Assembly Election) প্রচার শুরু করছেন এক অনন্য উদ্যোগ নিয়ে। কাল, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে ‘সীমান্তল ন্যায় যাত্রা’, যা বিহারের সীমান্তল অঞ্চলের উন্নয়ন ও ন্যায়বিচারের দাবিতে কেন্দ্রীভূত। মুসলিম-প্রধান এই অঞ্চলে এআইএমআইএমের প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্যে এই যাত্রা এক কৌশলগত পদক্ষেপ, যা ২০২৫-এর নির্বাচনে দলটির আসন সংখ্যা বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে।
সীমান্তল বিহারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় একটি সংবেদনশীল অঞ্চল, যাতে কিশনগঞ্জ, পূর্ণিয়া, আরিয়া এবং কটিহার জেলা অন্তর্ভুক্ত। এখানে মুসলিম জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু অর্থনৈতিক ও সামাজিক পশ্চাৎপদতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। ওয়াইসি এই যাত্রায় রোড শো, কর্ণার মিটিং এবং জনসভার মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যা তুলে ধরবেন।
তিনি বলেছেন, “সীমান্তলের মানুষ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অবহেলার শিকার। আমরা উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের জন্য লড়াই করব। এই যাত্রা শুধু প্রচারণা নয়, ন্যায়ের আন্দোলন।” যাত্রা কিশনগঞ্জ থেকে শুরু হবে এবং এইচএম বিধানসভা কেন্দ্রসহ কয়েকটি কেন্দ্রে থামবে।
এআইএমআইএমের বিহারে ইতিহাস সফলতা ও চ্যালেঞ্জের মিশ্রণ। ২০২০-এর বিধানসভা নির্বাচনে দলটি সীমান্তলের ২০টি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৫টি জিতেছিল, যা মহাগঠবন্ধনের (আরজেডি, কংগ্রেস, লেফট) জন্য ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কোটহমান, কিশনগঞ্জ, আমুর, বাহাদুরগঞ্জ, বাইসী, ঠাকুরগঞ্জ এবং জোকিহাট কেন্দ্রে দলটির প্রভাব ছিল স্পষ্ট।
কিন্তু ২০২২-এ চারজন এমএলএ আরজেডি-তে যোগ দেন, যা দলটির জন্য বড় ধাক্কা। এখনও সীমান্তলের ৫-৮টি কেন্দ্রে দলটি শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ওয়াইসি বলেছেন, “আমরা ২০২৫-এ সীমান্তলের বাইরেও ৫০-১০০টি আসনে লড়ব, যাতে বিজেপি-জেডিইউ গঠবন্ধনকে থামানো যায়।”
এই যাত্রা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ সীমান্তলের ২৪টি আসন বিহার নির্বাচনের চাবিকাঠি। ২০২০-এ এনডিএ (বিজেপি-জেডিইউ) ১২টি, মহাগঠবন্ধন ৭টি এবং এআইএমআইএম ৫টি জিতেছিল। মহাগঠবন্ধন AIMIM কে ‘বিজেপির বি-টিম’ বলে অভিযোগ করে, যা ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটায় এবং তাদের ভোট কেটে নেয়।
তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন আরজেডি AIMIM এর সাথে জোট গঠনে অনীহা দেখাচ্ছে, কারণ এটি হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের প্রচারণা তৈরি করতে পারে। ওয়াইসি তিনবার মহাগঠবন্ধনের কাছে জোটের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, কিন্তু সাড়া পাননি। তিনি বলেন, “আমরা বিজেপিকে থামাতে চাই, কিন্তু যদি জোট না হয়, তাহলে স্বাধীনভাবে লড়ব।”
সীমান্তলের সমস্যা গভীর। এখানে দারিদ্র্য, বন্যা, অভাব এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্যের অভাব প্রধান। ওয়াইসি এই যাত্রায় এনআরসি-সিএএ, ভোটার তালিকা সংশোধন এবং স্পিআইআর (স্পেশাল ইনটেনসিভ রেভিউ) নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন, যা মুসলিম ভোটারদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করছে। দলটি স্থানীয় নেতা আখতারুল ইমানের নেতৃত্বে সীমান্তলের উন্নয়নের জন্য নতুন নীতি দাবি করবে।
এই যাত্রা শুধু মুসলিম সম্প্রদায় নয়, স্থানীয় যুবকদের মধ্যে উত্সাহ জাগাবে।বিহারের রাজনীতিতে এই যাত্রা নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। এআইএমআইএমের উত্থান মহাগঠবন্ধনকে চাপে ফেলেছে, যাতে তারা সেক্যুলার ভোট বিভক্ত হওয়া এড়াতে চায়। বিজেপি এটিকে ‘ভোটকাটোয়া’ বলে প্রচার করতে পারে।
কিন্তু ওয়াইসির জনপ্রিয়তা, বিশেষ করে জাতীয় ইস্যুতে তাঁর সোচ্চার ভাষণ, দলটিকে শক্তিশালী করেছে। যদি AIMIM ২০২৫-এ সীমান্তলের ৮-১০টি আসন জয় করে, তাহলে বিহারের রাজনীতির মানচিত্র বদলে যাবে।এই যাত্রা বিহারের যুবক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আশার আলো।
বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর আর্জি মুখ্যমন্ত্রীর
ওয়াইসির আগমন সীমান্তলকে দিল্লির রুট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা, যা অঞ্চলের রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়াবে। ভোটাররা অপেক্ষায় রয়েছেন এই যাত্রার ফলাফলের, যা নির্বাচনী লড়াইকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে। সীমান্তলের ন্যায়ের দাবি এখন রাজনৈতিক মঞ্চে প্রধান হয়ে উঠেছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
