বিধানসভার মুখে নীতিশকে ‘কড়া দাওয়াই’ পিকের

আগামী নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা ভোট হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই বিহারের রাজনৈতিক মহলে উত্তপ্ত আলোচনা চলছে। নির্বাচনী কৌশলবিদ তথা রাজনীতিবিদ প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছেন যে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী…

Prashant Kishor on Nitish Kumar

short-samachar

আগামী নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা ভোট হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই বিহারের রাজনৈতিক মহলে উত্তপ্ত আলোচনা চলছে। নির্বাচনী কৌশলবিদ তথা রাজনীতিবিদ প্রশান্ত কিশোর দাবি করেছেন যে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তবে পরে তাঁর দল বদল করার সম্ভাবনা রয়েছে। কিশোরের এই দাবি বিহারের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন করে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। যেখানে নিতীশ কুমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা চলছে।

   

মঙ্গলবার পশ্চিম চম্পারণ জেলায় এক সংবাদ সম্মেলনে কিশোর বলেছেন, “নিতীশ কুমার বিহারের নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে অংশ নেবেন, তবে নির্বাচনের পর তিনি হয়তো আবার দল বদল করতে পারেন।” তিনি আরও দাবি করেছেন,নিতীশ কুমারের জনপ্রিয়তা এতটাই কমে গেছে যে তিনি আর নিজের পঞ্চম বার্ষিক মেয়াদ লাভ করতে পারবেন না, যতই তিনি কোন জোটে থাকুন না কেন।

কিশোরের মতে, “নিতীশ কুমারের জন্য এবারের নির্বাচনই হতে চলেছে শেষ সুযোগ। কোনোভাবেই তিনি আর মুখ্যমন্ত্রী পদে ফিরবেন না। এছাড়া তিনি দাবি করে বলেছেন, যদি আমি ভুল প্রমাণিত হই, তবে আমি আমার রাজনৈতিক ক্যাম্পেইন ছেড়ে দেব”, “নিতীশ কুমারের উপর জনগণের আস্থা কমে গেছে এবং তিনি বিজেপির কাছে মুখ্যমন্ত্রী পদ প্রার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতা করার জন্য একটি দুর্বল প্রার্থী হয়ে উঠেছেন।”

প্রশান্ত কিশোর উল্লেখ করেছেন, নিতীশ কুমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”নিতীশ কুমার যে কোন একটি জোটে থাকলেও, বিজেপি তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদ ঘোষণা করতে চাচ্ছে না, কারণ তাদের ধারণা কুমারের জনপ্রিয়তা কমে গেছে।” কিশোর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ করেছেন যে, তারা যদি নিশ্চিত করেন যে, নিতীশ কুমার নির্বাচনের পর পাঁচ বছর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তবে বিজেপি হয়তো আগের মতো আসন জয় করতে পারবে না।

নিতীশ কুমারের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার সমালোচনা

বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার ব্যাপারে প্রশান্ত কিশোর আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, “নিতীশ কুমার শারীরিকভাবে ক্লান্ত এবং মানসিকভাবে অবসরপ্রাপ্ত। বিজেপি নেতা সুশীল কুমার মোধী বলেছেন যে, কুমার মানসিকভাবে অসুস্থ।” কিশোর দাবি করেন, “নিতীশ কুমার তাঁর নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম বলতে পারেন না, তার মানে তিনি কি করে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হবেন?”

কিশোরের মতে, গত বছর নিতীশ কুমার যখন মোদীর পদ্মে শ্রীপদক্ষেপ করেছিলেন, তা ছিল স্রেফ সিপাহীতা এবং শুধুমাত্র তাঁর পদে টিকে থাকার জন্য। “এটা বিহারের জন্য অমার্জনীয়, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে তিনি সবার সামনে পায়ের মুঠো দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন, যখন অন্যান্য মুখ্যমন্ত্রীগণ উপস্থিত ছিলেন,” মন্তব্য করেন কিশোর।

বিহারের রাজনীতির ভবিষ্যত ও নতুন পরিবর্তন

কিশোর তার নতুন রাজনৈতিক দল “জন সুরাজ পার্টি” প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং জানিয়েছেন বিহারের রাজনীতি নিতীশ কুমার এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী লালু প্রসাদ যাদবের দ্বারা দীর্ঘদিন ধরে বন্দী হয়ে আছে। তাঁর মতে, জন সুরাজ পার্টি বিহারের রাজনীতিকে নতুন দিশায় পরিচালিত করতে চায় এবং রাজনৈতিক পুনর্গঠন করবে।
তিনি বিহারে মদ নিষিদ্ধকরণের নীতি সম্পর্কে বিজেপির দ্বৈত চরিত্র নিয়ে সমালোচনা করেন। “বিজেপি কেন উওরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং অন্যান্য রাজ্যগুলির বিজেপি শাসিত মুখ্যমন্ত্রীদেরও মদ নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেয় না?” প্রশ্ন করেন কিশোর। এছাড়াও তিনি যোগ করেছেন “বিহারের মানুষের জন্য শুধু পাঁচ কেজি বিনামূল্যে খাদ্য এবং মদ নিষিদ্ধকরণের মত উদ্যোগের পরিবর্তে অন্য কিছু দরকার।”

প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ এবং নির্বাচনী মাঠে নতুন পরিস্থিতি

আসন্ন বিধানসভার আগে প্রশান্ত কিশোরের এসব মন্তব্য বিহারের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষত তিনি যে দাবি করেছেন যে নিতীশ কুমার নির্বাচনের পর বিজেপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির পর দল বদল করবেন, তা আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক কৌশলের পটভূমি হতে পারে।
বিহারের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে নিতীশ কুমারের নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ, বিশেষ করে যদি কিশোরের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়।