দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে অভিষেকের শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে জোর জল্পনা দলের অন্দরেই

রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) দেওয়া শুভেচ্ছাবার্তা ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক জল্পনা শুরু…

Abhishek Banerjee Alleges Income Tax Department Sent Letter Over Old Age Allowance Scheme

রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) দেওয়া শুভেচ্ছাবার্তা ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়েছে। এই শুভেচ্ছাবার্তায় একমাত্র অভিষেকের (Abhishek Banerjee)  ছবি প্রকাশিত হয়েছে, আর যেখানে আগে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকত, সেখানে এবার তাঁর ছবি নেই। শুধু ছবি নয়, শুভেচ্ছাবার্তায় লেখা হয়েছে, “রাজ্য তথা দেশবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে মা মাটি মানুষ সর্বদা নিয়োজিত।” কিন্তু কেন মমতার ছবি এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে।

এমন শুভেচ্ছাবার্তা পোস্ট করার পর থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিভিন্ন তত্ত্বের ওপর মন্তব্য করছেন। সাধারণত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সমস্ত পোস্টেই তার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এবার একাই অভিষেক, এবং এর পেছনে কোনও গোপন বার্তা কি রয়েছে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

   

বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি প্রবীণ এবং নবীন নেতাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের ইঙ্গিত হতে পারে। এর আগে, অভিষেকের কিছু কার্যকলাপে কম সক্রিয়তা দেখা গিয়েছিল, কিন্তু তাঁর নিজের সংসদীয় কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে তিনি বেশ সক্রিয় থাকেন। সেখানে তিনি একাধিক বার বলেছিলেন যে, যারা নেত্রীর ভরসা পেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। রাজনৈতিক মহলে এটা স্পষ্ট যে, এই মন্তব্যগুলো দলীয় প্রবীণদের উদ্দেশেই ছিল।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাবার্তা হয়তো নতুন কিছু সূচনা করছে। এটা যেন দলের প্রবীণ এবং নবীন নেতৃত্বের মধ্যে এক অঘোষিত দ্বন্দ্বের প্রকাশ। একদিকে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যুবপ্রতিনিধি হিসেবে দলের মধ্যে আরও সক্রিয় হতে চাইছেন, অন্যদিকে, প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের ভাটা তৈরি হতে পারে এমনও আশঙ্কা করা হচ্ছে। অভিষেকের পক্ষে মমতার ছবির অনুপস্থিতি হয়তো এই দ্বন্দ্বের আরও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।

Advertisements

বিরোধী শিবিরও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “প্রতিবার যে মুখ্যমন্ত্রী চার্চে প্রার্থনায় যান, সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সঙ্গী হতে দেখেছি। কিন্তু এবারে ভাইপোকে সঙ্গে নিয়ে যাননি। এটা হয়তো তারই বদলা।” বিজেপির পক্ষ থেকে অভিষেকের এই একক উদ্যোগকে লক্ষ্য করে শ্লেষাত্মক মন্তব্য করা হয়েছে, এবং তারা বলেছে, “আমরা অভিষেককে স্বাগত জানাব।”

এখন, প্রশ্ন উঠছে, এই অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেসের ভবিষ্যত কী হবে। দলের দুই শীর্ষ নেতৃত্ব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশেষত তাঁদের সম্পর্ক, দলের কর্মসূচী এবং দলের রাজনীতি কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা সময়ের সাথে স্পষ্ট হবে। প্রবীণ এবং নবীন নেতৃত্বের মধ্যে তৈরি হওয়া এই টানাপোড়েন তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে, যেগুলো দলের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাবার্তা এবং তার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি না থাকার ঘটনাটি শুধু একটি শুভেচ্ছাবার্তা নয়, বরং রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে এটি একটি বড় সংকেত। যা ভবিষ্যতে তৃণমূল কংগ্রেসের ভেতরে প্রবীণ এবং নবীন নেতৃত্বের মধ্যে আরও আলোচনার জন্ম দিতে পারে। তবে, এখনই বলা সম্ভব নয় যে, এই ঘটনার পরিণতি কী হতে চলেছে, তবে এটা যে দলের মধ্যে নানা জল্পনা তৈরি করেছে, তা নিশ্চিত।