স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নন, যেন বিজেপির নির্বাচনী এজেন্ট, তোপ তৃণমূলের

অমিত শাহকে নিশানা করে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অমিত শাহই সবচেয়ে…

Amid Deadlock Over New Chief, BJP Set to Appoint Its First Woman President

অমিত শাহকে নিশানা করে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অমিত শাহই সবচেয়ে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।” পহেলগামের জঙ্গিহানা থেকে শুরু করে জম্মু-কাশ্মীরে লাগাতার সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ, অনুপ্রবেশ, এমনকি বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা— সব কিছু নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। তাঁর কটাক্ষ, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অধীনে এই সমস্ত ঘটনা ঘটছে, অথচ কেন্দ্র দোষ চাপাতে চায় রাজ্য সরকারের উপর।

পহেলগাম হামলা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর দায়
মঙ্গলবার লোকসভায় এবং বুধবার রাজ্যসভায় পহেলগাম ইস্যুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরব হন। বিরোধীদের এক হাত নেন তিনি। পাল্টা জবাবে বুধবার সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘পহেলগামে যখন জঙ্গি হামলা হচ্ছে, তখন বিএসএফ কী করছিল? চারজন জঙ্গি কীভাবে ঢুকল? সীমান্তরক্ষী বাহিনী কি তৃণমূল কংগ্রেসের অধীনে? বিএসএফ কার অধীনে? তৃণমূল কি সীমান্ত পাহারা দেয়?’’

   

তিনি অভিযোগ করেন, অমিত শাহের আমলে সীমান্তে অনুপ্রবেশ বেড়েছে। শুধু অনুপ্রবেশ নয়, সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনাও বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘২০১৯ সালে অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই একের পর এক ব্যর্থতা ধরা পড়েছে। পুলওয়ামা থেকে শুরু করে পহেলগাম— সর্বত্র চূড়ান্ত ব্যর্থতা। তার জন্য দায়ী কে?’’

গরু ও কয়লা পাচারের দায়ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর
শুধু সীমান্তে নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বাংলায় বিজেপির তরফে যেসব অভিযোগ তোলা হয়— যেমন গরু পাচার, কয়লা পাচার— সেগুলির নেপথ্যেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর মদত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি বলছে, গরু পাচার হচ্ছে। বলছে, কয়লা পাচার হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই পাচার কে করছে? কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া তা কি সম্ভব? বিএসএফ আর সিআইএসএফ কার অধীনে? এই বাহিনীগুলো কি তৃণমূল চালায়?’’

স্বাধীনতার পর ‘সবচেয়ে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’
সরাসরি অমিত শাহকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, ‘‘১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর এত ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর আসেনি। উনি ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছেন বিরোধীদের আক্রমণ করে। অথচ দেশের মানুষ সব বুঝে গিয়েছে। দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার করুণ দশা— যার সম্পূর্ণ দায় অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।’’

Advertisements

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কেন্দ্রীয় এজেন্সি?
এদিনের বক্তব্যে অভিষেক তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির ভূমিকার প্রশ্নও। তাঁর কথায়, ‘‘আজ কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত সংস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। ইডি, সিবিআই, এনআইএ— সবাই যেন বিজেপির অঙ্গ সংগঠন। বাংলায় বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে, মিথ্যে মামলা বানাতে এই সংস্থাগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ, যেখানে সত্যিই তদন্ত দরকার, সেখানে তারা ব্যর্থ। কাশ্মীর হোক বা মণিপুর, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কোনও আগাম তথ্য দেয়নি, কোনও হামলা প্রতিরোধ করতে পারেনি।’’

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের বক্তব্য কার্যত কেন্দ্রকে তীব্র চাপে ফেলেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায় নিয়ে যে প্রশ্ন তিনি তুলেছেন, তা সংসদের বাইরেও জোর চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। বাংলার রাজনীতিতে কেন্দ্র বনাম রাজ্যের দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা যোগ করল এই কড়া মন্তব্য। এবার দেখার, এই মন্তব্যের পাল্টা কীভাবে দেয় বিজেপি শিবির।