উত্তর দিনাজপুর–বহরমপুরে ভোটের রণকৌশল সাজাতে সোমেই মঞ্চে অভিষেক

তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সাংগঠনিক তৎপরতা ফের জোরদার হচ্ছে। কোচবিহার–আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি–মালদা জেলার সাংগঠনিক বৈঠকের পর এ বার তাঁর নজর…

Abhishek Banerjee Holds Key Meeting Today on Uttar Dinajpur and Baharampur Issues

তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সাংগঠনিক তৎপরতা ফের জোরদার হচ্ছে। কোচবিহার–আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি–মালদা জেলার সাংগঠনিক বৈঠকের পর এ বার তাঁর নজর উত্তর দিনাজপুর ও বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার দিকে। আজ, সোমবার সকাল ১১টা থেকে এই দুই জেলার শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে পরপর বৈঠক করবেন তিনি। আসন্ন রাজনৈতিক সময়সীমা ও নির্বাচনী প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখেই এই বৈঠকগুলিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্রের খবর, উত্তর দিনাজপুর ও বহরমপুর—দুটি জেলা-ই তৃণমূলের কাছে কৌশলগত দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তর দিনাজপুর সীমান্তবর্তী জেলা, যেখানে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনমুখী ইস্যু এবং বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটির সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। অন্য দিকে বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা মূলত মুর্শিদাবাদ জেলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যা ঐতিহ্যগত ভাবে কংগ্রেস ও পরে অন্য বিরোধী দলের প্রভাব এলাকায় পড়ে এসেছে। তাই এই অঞ্চলে তৃণমূলের সাংগঠনিক ঘাঁটি মজবুত করা দলের অন্যতম লক্ষ্য।

   

অভিষেকের (Abhishek Banerjee) এই বৈঠকে জেলার সভাপতি থেকে ব্লক পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ—সবাইকে ডাকা হয়েছে। আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু থাকবে সাংগঠনিক কাঠামোর দুর্বলতা চিহ্নিত করা, কর্মীসংগঠন শক্তিশালী করার রূপরেখা তৈরি, এবং আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের মোকাবিলায় কীভাবে সর্বাত্মক প্রচার চালানো যায় সেই বিষয়ে পরিকল্পনা। পাশাপাশি, বুথভিত্তিক সংগঠন, জনসংযোগ অভিযান, এবং সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কৌশল নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বৈঠকে প্রত্যেক নেতাকে স্পষ্ট বার্তা দিতে পারেন যে, এখন থেকে মাঠে নেমে কাজের প্রমাণ দিতে হবে। শুধুমাত্র পদে থাকা নয়, মানুষের আস্থা অর্জন করাই হবে প্রকৃত নেতৃত্বের পরিচয়। বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলে, যেখানে বিরোধীরা ভোট ভাগাভাগি করার চেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানে প্রতিটি কর্মীকে সক্রিয় থাকার নির্দেশ আসতে পারে।

উত্তর দিনাজপুরে গত কয়েক বছরে তৃণমূলের সংগঠন কিছুটা হলেও শক্তিশালী হয়েছে, তবে এখনও কিছু এলাকায় বিজেপি এবং কংগ্রেসের প্রভাব রয়ে গিয়েছে। সেসব জায়গায় নতুন মুখ, তরুণ নেতৃত্ব এবং মহিলা কর্মীদের আরও বেশি করে সামনে আনার পরিকল্পনা থাকতে পারে এই বৈঠকে।

Advertisements

অন্যদিকে বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এখানে তৃণমূলকে কংগ্রেস এবং বিজেপি—উভয়ের সঙ্গেই লড়াই করতে হয়। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলের হাতে থাকায়, সেই গড় ভাঙতে গেলে সংগঠনের শক্তি দ্বিগুণ করতে হবে। অভিষেকের বৈঠকে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা হতে পারে বলে ধারণা।

রাজনৈতিক মহলের মতে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) এই ধারাবাহিক সাংগঠনিক বৈঠক আসলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং তার আগে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রস্তুতির অঙ্গ। তিনি একদিকে যেমন উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক সমীকরণ মজবুত করছেন, তেমনই দক্ষিণবঙ্গের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলাকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন। এভাবে ধাপে ধাপে প্রতিটি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে সরাসরি মুখোমুখি হয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজছেন।

এদিকে, দলের একাংশের মতে, এই বৈঠকের মাধ্যমে অভিষেক আবারও প্রমাণ করছেন যে তিনি শুধু সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই নয়, কার্যত মাঠের নেতৃত্ব হিসেবেও সমান সক্রিয়। তাঁর এই গতিময় কর্মপদ্ধতি তৃণমূলের গ্রামীণ স্তরের কর্মীদেরও উৎসাহিত করছে।

সোমবারের বৈঠক শেষে কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। উত্তর দিনাজপুর ও বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে অভিষেকের এই বৈঠক নিঃসন্দেহে রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে।