নয়াদিল্লি, ৫ অক্টোবর ২০২৫: ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (Election Commission) জ্ঞানেশ কুমার শনিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায় বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে আধার কার্ড নাগরিকত্ব বা জন্ম তারিখের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি এই বক্তব্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতি এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আধার কার্ডের ব্যবহার নিয়ে চলতি বিতর্কের প্রেক্ষিতে করেছেন।
কুমারের এই মন্তব্য আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচন এবং অন্যান্য রাজ্যের নির্বাচনী প্রস্তুতির সময় ভোটার পরিচয় যাচাইয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।জ্ঞানেশ কুমার পাটনায় একটি প্রেস কনফারেন্সে বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে, আধার কার্ড শুধুমাত্র পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু এটি নাগরিকত্ব বা জন্ম তারিখ যাচাইয়ের জন্য বৈধ নথি নয়।”
“সনাতন-পরিপন্থী!” Miss Rishikesh-এর মহড়া বন্ধ করাল হিন্দুত্ববাদী সংগঠন
তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্ত করার জন্য আধার নম্বর সংগ্রহ করছে, তবে এটি ঐচ্ছিক এবং নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য নয়। এই নির্দেশনা ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে এসেছে, যেখানে বলা হয়েছিল যে আধার কার্ড শুধুমাত্র বাসিন্দাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হবে, নাগরিকত্ব নয়।
নির্বাচন কমিশনের এই অবস্থান জাতীয় নাগরিক পঞ্জী (এনআরসি) এবং নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (সিএএ)-এর প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। কুমার জানিয়েছেন, ভোটার তালিকায় নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য পাসপোর্ট, জন্ম শংসাপত্র, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অন্যান্য সরকারি নথি গ্রহণযোগ্য, তবে আধার একমাত্র নথি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। তিনি বলেন, “আমরা ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আধারের ব্যবহার শুধুমাত্র ডুপ্লিকেট এন্ট্রি এড়ানোর জন্য।”
এই ঘোষণা ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আধারের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ককে আরও জোরদার করেছে। সম্প্রতি, কিছু রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনগুলি আধার-ভিত্তিক ভোটার যাচাইয়ের বিরোধিতা করেছে, এই যুক্তিতে যে এটি সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
কংগ্রেস নেতা জিতেন্দ্র পাটওয়ারী বলেছেন, “আধারকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হলে অনেক নাগরিক তাদের ভোটাধিকার হারাতে পারে। সরকারের উচিত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পুরোপুরি মেনে চলা।” অন্যদিকে, বিজেপি নেতারা বলছেন, আধারের ব্যবহার ভোটার তালিকার নির্ভুলতা বাড়াবে এবং ভুয়ো ভোট প্রতিরোধ করবে।
ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (ইউআইডিএআই) জানিয়েছে, আধার একটি বাসিন্দা-ভিত্তিক পরিচয় ব্যবস্থা, যা ভারতে বসবাসকারী যে কাউকে দেওয়া হয়, নাগরিকত্ব নির্বিশেষে। এটি সরকারি সুবিধা, যেমন ডিবিটি স্কিম, স্কলারশিপ এবং শিক্ষাগত প্রকল্পে অ্যাক্সেসের জন্য ব্যবহৃত হয়।
তবে, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুসারে, ভোটার আইডি কার্ড এবং অন্যান্য নথি নাগরিকত্ব ও বয়স যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করা হবে। কুমার বলেন, “আমরা নিশ্চিত করছি যে কোনো প্রকৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে। আধার ঐচ্ছিক, এবং যাদের কাছে আধার নেই, তারাও ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত হতে পারবেন।