Dr BR Ambedkar: হিন্দু ধর্মের সমালোচক আম্বেদকর হিন্দুত্ব ত্যাগ করে বেছেছিলেন বুদ্ধের পথ

বিশেষ প্রতিবেদন: দলিত ছিলেন আম্বেদকরের (Dr BR Ambedkar)। এই দলিতদের মধ্যে মহর যারা সেই পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তিনি, এই জাতিকে তখন অস্পৃশ্য জাতি হিসেবে…

Dr BR Ambedkar

বিশেষ প্রতিবেদন: দলিত ছিলেন আম্বেদকরের (Dr BR Ambedkar)। এই দলিতদের মধ্যে মহর যারা সেই পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তিনি, এই জাতিকে তখন অস্পৃশ্য জাতি হিসেবে গণ্য করা হত। কিন্তু এই সব কিছুকে ছেড়ে দিন গ্রহণ করেছিলেন গৌতম বুদ্ধের পথ। কারণ তিনি বলতেন ‘মানুষের মত ব্যবহার পেতে চাইলে ধর্মান্তরিত হোন’। আসলে তিনি হিন্দুত্বের কড়া সমালোচক ছিলেন বলে জানা যায়।

হিন্দুত্বের সমালোচক ছিলেন ভারতীয় সংবিধানের রচয়িতা। তিনি মনে করতেন ভারতীয় সমাজের পক্ষে ভয়ঙ্কর। এমনকি ব্রিটিশদের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক বলে বোধ করতেন এই হিন্দুত্বকে। ১৯৩৬ সালে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের সবাইকে খুব সুনির্দিষ্ট ভাবে বলছি, মানুষ ধর্মের জন্য, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। মানুষের মত ব্যবহার পেতে চাইলে ধর্মান্তরিত হোন”।

   

এরপর ২০ বছর ধরে তিনি কোন ধর্ম তার পক্ষে সবচেয়ে ভালো, তা স্থির করেন। তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে ধর্মেই তিনি যান না কেন, তা হত হবে ভারতের মাটির ধর্ম। শেষ পর্যন্ত তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে বেছে নেন এবং বৌদ্ধ ধম্মের নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করেন, ধর্মের কিছু অংশ বদলে নেন, যেগুলি তার বিশ্বাসমতে বৌদ্ধধর্মের সার্বিকতার পরিপন্থী। এরপরে ১৯৫৬ সালে ১৪ অক্টোবর ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার দলিত অনুগামীকে সঙ্গে নিয়ে হিন্দু ধর্ম ছেড়ে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। আম্বেদকরের বৌদ্ধ ধর্মগ্রহণ ভারতের লিত আন্দোলনে নতুন সাড়া জাগায় এবং হিন্দুত্বের চতুর্বর্ণ প্রথার শৃঙ্খল থেকে তাদের মুক্তি দিয়ে দলিতদের নিজস্ব স্বর গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

Advertisements

আম্বেদকর সারাজীবন সামাজিক বৈষম্যের ‘চতুর্বর্ণ পদ্ধতি’-হিন্দু সমাজের চারটি বর্ণ এবং ভারতবর্ষের অস্পৃশ্যতা প্রথার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গিয়েছেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং হাজারো অস্পৃশ্যদের থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্মে রূপান্তরিত করেন। বহু সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে, ভারতে কলেজ শিক্ষা অর্জনে আম্বেদকর প্রথম ‘দলিত ব্যক্তি’ হিসেবে স্বীকৃতি পান । অবশেষে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয়, ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স’ থেকে আইনে ডিগ্রি লাভ করার পর, আম্বেদকর বিদ্বান ব্যক্তি হিসেবে সুনাম অর্জন করেন এবং কিছু বছর তিনি আইন চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন । পরে তিনি ভারতের অস্পৃশ্যদের সামাজিক অধিকার ও সামাজিক স্বাধীনতার উপর ওকালতির সময় সমসাময়িক সংবাদপত্র প্রকাশ করেছিলেন। কিছু ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা তিনি ‘বোধিসত্ত্ব’ উপাধিতে সম্মানিত হয়েছিলেন, যদিও তিনি নিজেকে ‘বোধিসত্ত্ব’ হিসেবে কখনও দাবি করেননি।

‘মোহ’ অঞ্চলের (বর্তমান মধ্য প্রদেশ) এবং কেন্দ্রীয় সামরিক সেনানিবাসে ব্রিটিশ কর্তৃক স্থাপিত শহরে আম্বেদকর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন রামজী মালোজী শাকপাল এবং ভীমাবাইের ১৪তম তথা সর্বকনিষ্ঠ পুত্র। তার পরিবার ছিলেন মারাঠী অধ্যুষিত বর্তমান কালের “মহারাষ্ট্র”-এর রত্নগিরি জেলার ‘আম্বোভাদ’ শহরে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিভুক্ত ছিল (মহর জাতি), যারা অস্পৃশ্য জাতি হিসেবে এবং প্রচণ্ড আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের শিকার হত। আম্বেদকরের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট – ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনা এবং তার বাবা রামজী শাকপাল ‘মোহ’ সেনানিবাসের ভারতীয় সেনা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। আম্বেদকরকে ১৯৯০ সালে মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন’ পান।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News