বিশেষ প্রতিবেদন: বাংলার সাথে রাজস্থানের রয়েছে এক আত্মিক যোগ। সেই কবে রবিঠাকুর বুঁদির কেল্লা লিখে হারাবংশীদের বীরগাথা শুনিয়েছেন । তারপর অবন ঠাকুর থেকে দ্বিজেন্দ্রলাল বর্ণনা করেছেন আরাবল্লী আর হলদিঘাটে তাদের লড়াই আর আত্মত্যাগের কাহিনী।
সোনার কেল্লা দেখিয়ে সত্যজিৎ বাবু উস্কে দিয়েছেন বাঙালির দুর্গ প্রীতি আর শেষমেশ ঊষা গাঙ্গুলীর রুদালি ছবিতে লতাজীর গান শুনে “দিল হুম হুম” করতে করতে লাখে লাখে বঙ্গসন্তান বেড়াতে গেছে রাজস্থান! কিন্ত এর অনেক আগে সেখানকার এক মহারাজা তার রাজধানী গড়ে দেবার জন্য শরণাপন্ন হয়েছিল এক বাঙালির, এটা কি জানেন?
আগ্রা থেকে জয়পুর যাবার পথে শহরে ঢোকার আগেই পাহাড়ের ঢালে আছে এক অপূর্ব সুন্দর বাগান । রাজস্থান সরকার পরিচালিত এটির প্রবেশ পথে লেখা বিদ্যাধর গার্ডেন । ভেতরে স্বচ্ছ জলাধার, ঝর্ণা, ফুলের বাগান আর হিন্দু ও মোগল স্থাপত্যের অনবদ্য কিছু নিদর্শন । গোটা জয়পুর শহরটা এখান থেকে ছবির মতো দেখা যায় । বিদ্যাধর স্মরণে ১৯৮৮ তে সুপ্রাচীন ‘শিল্পশাস্ত্র’ অনুসরণে গড়ে উঠেছিল এই বাগিচা। কে ইনি? পুরো নাম বিদ্যাধর ভট্টাচার্য, জন্ম ১৬৯৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটিতে।
ভাগ্যান্বেষণে চলে যান রাজস্থান এবং আমের রাজের অধীনে কর্মে নিযুক্ত হন । প্রাচীন শিল্প ও বাস্তুশাস্ত্রের ওপর তার ব্যূতপত্তির কথা কানে যায় রাজা সোয়াই জয়সিংহের কানে । লোক মারফত ১৭২৭ সালে ডেকে আনেন তাকে এবং অনুরোধ করেন নিজের নামে নতুন এক শহরের পরিকল্পনা ও নকশা তৈরী করতে ।
এই বঙ্গসন্তানই স্যার স্যামুয়েল জ্যাকবের সাথে যৌথ ভাবে গড়ে তোলেন ভারতের প্রথম পরিকল্পিত নগর জয়পুর বা পিঙ্ক সিটি !
১৭২৭ সালের ১৮ নভেম্বর জয়পুর শহরের পত্তন করেন অম্বরের মহারাজা সওয়াই জয়সিংহ (দ্বিতীয়)। এর মূল স্থপতি ছিলেন বিদ্যাধর ভট্টাচার্য। বিদ্যাধর ভট্টাচার্য প্রাচীন ভারতের শিল্পশাস্ত্র এবং বাস্তুশাস্ত্র অনুসরণ করে জয়পুর শহরের নকশা তৈরি করেন। এটিই স্বাধীনতাপূর্ব ভারতের প্রথম সুপরিকল্পিত নগর যা আজও বিশ্ববাসীর কাছে অন্যতম দ্রষ্টব্য।
জয়পুরের সুপরিকল্পিত কানন “বিদ্যাধর গার্ডেন” তার সম্মানেই নির্মিত হয়। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটিতে স্থপতি বিদ্যাধর ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন সন্তোষরাম ভট্টাচার্য। তিনি গণিত, জ্যোতিষ, বাস্তু, পূর্তবিদ্যায় এবং রাজনীতিতে পারদর্শী ছিলেন। মহারাজা তাঁকে মন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেছিলেন। পরে তাকেই জয়পুর নগর নির্মাণের দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন।