অনলাইন ডেস্ক: কোনও প্রতিযোগীতায় জিতলে দেওয়া হয় সোনার মেডেল, বা সুদৃশ্য ট্রফি। শুরুর দিকে অলিম্পিকে বিজয়ীদেরও দেওয়া হতো জলপাই গাছের পাতার মুকুট। কিন্তু মানুষের মাথা ? ঠিক এমন রীতিই প্রচলিত ছিল বিশ্বের এক আদিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে।
আদিম জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে নানা ধরনের রীতি রেওয়াজ যে প্রচলিত ছিল। পৃথিবীর নানা প্রান্তে এখনো অনেক আদিম জনগোষ্ঠী থেকে গিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই সভ্য সমাজ থেকে আজও নিজেদের আলাদা করে রেখেছে। অনেকেই আবার সভ্য সমাজের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।
পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উন্নত দেশগুলোর অন্যতম নিউজিল্যান্ড। এখানকারই অন্যতম জনগোষ্ঠী হল মাওরি। দেশটির উন্নয়নের ছোঁয়া এসে পড়েছে আদিম জনগোষ্ঠীর ওপরেও। মূলস্রোতের মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছে নিউজিল্যান্ডের এই আদিবাসীরা। এমনকি নিউজিল্যান্ডের উপ প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মাওরি গোষ্ঠীভুক্ত উইনস্টন পিটারস।
অন্যান্য জনগোষ্ঠীর থেকে স্বভাব-চরিত্রে অনেকটাই আলাদা মাওরিরা। মাওরিদের কাঠ খোদাই শিল্প পৃথিবী বিখ্যাত। আসবাবপত্র, নৌকা, হস্তশিল্প প্রভৃতিতে এই আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষরা যে অসামান্য নকশা ফুটিয়ে তোলে তার কদর গোটা বিশ্ব জুড়েই আছে। অন্যান্য জনগোষ্ঠীর থেকে সে সময় শিল্পে বেশি পারদর্শী ছিল এই আদিবাসী সম্প্রদায়।
যদিও এই জনগোষ্ঠীরই একটি অদ্ভুদ রীতি ছিল। কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেলে শেষকৃত্যের সময় দেহ থেকে মাথা আলাদা করে নিত এরা। এরপর মাথার যাবতীয় পচনশীল অংশ অর্থাৎ চোখ, মস্তিষ্ক ইত্যাদি বের করে মাথাটাকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে রোদের মধ্যে শুকনো করা হত। যাতে চামড়া নষ্ট না হয়ে যায় সেই উদ্দেশ্যে হাঙরের পাকস্থলী থেকে তৈরি এক রকমের তেল এই মাথা গুলিতে মাখিয়ে দেওয়া হতো। এর ফলে বছরের পর বছর মাথা গুলি অবিকৃত অবস্থায় থাকতো। মাওরি ভাষায় সংরক্ষিত মাথাকে বলা হয় “মোকোমোকাই”।
যুদ্ধে পরাজিত সেনা নায়েকের মাথা এভাবেই সংরক্ষিত করে জয়ী সেনা নায়ককে উপহার দেওয়া হতো। এমনকি অন্য আদিবাসী জাতির সঙ্গে লড়াইয়ে জয় লাভ করার পর মাওরিরা পরাজিত রাজার মাথা কেটে একই উপায়ে সংরক্ষন করে তাদের দলপতিকে উপহার দিত। বর্তমানে আমেরিকার নিউইয়র্কের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে এই মোকোমোকাই দেখতে পাওয়া যায়।