যে কাঁকড়ার রক্ত বাঁচায় মানুষের প্রাণ

একটি কাঁকড়া (Horseshoe Crab)! যার এক লিটার রক্তের দাম প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। একটি দুটি নয়, এর শরীরে রয়েছে ১০টি চোখ। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও…

close-up image of a horseshoe crab, its unique blue blood being carefully extracted by a scientist in a sterile laboratory setting

একটি কাঁকড়া (Horseshoe Crab)! যার এক লিটার রক্তের দাম প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। একটি দুটি নয়, এর শরীরে রয়েছে ১০টি চোখ। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। এর রক্ত লালের বিপরীতে নীল হয়। শুধু তাই নয়, করোনা মহামারির বিশ্বজুড়ে যেখানে সবার নজর ছিল কীভাবে দ্রুত নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরি করা যায়। সেখানে সমুদ্রের এই ছোট্ট প্রাণী মানুষের জীবন বাঁচানোর লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু ভাবছেন তা আবার কিভাবে? আর এই কাঁকড়ার রক্তে এমন কী আছে, যা এত মূল্যবান?

সাধারণ মানুষের কাছে এটি পরিচিত না হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। বিশেষ এই কাঁকড়ার নাম ‘হর্স শু’ ক্র্যাব। মানুষের রক্তে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য লোহা-ভিত্তিক প্রোটিন হিমোগ্লোবিন ব্যবহৃত হয়, যা রক্তকে লাল রঙ দেয়। অন্যদিকে, ‘হর্স শু’ ক্র্যাবের রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে তামা-ভিত্তিক প্রোটিন হেমোসায়ানিন ব্যবহৃত হয়, যা রক্তকে নীল রঙ প্রদান করে। যার এক লিটারের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে গুনতে হবে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার।

   

The Life-Saving Blue Blood of the 'Horseshoe Crab' and Its Crucial Role in Medicine"

‘হর্স শু’ ক্র্যাবের রক্তে আছে লিমুলাস অ্যামেবোসাইট লাইসেট নামক এক বিশেষ উপাদান যা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করতে পারে। করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হলেও, সেটি মানুষের শরীরে প্রয়োগ করার আগে নিশ্চিত হতে হয় যে এতে কোনো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নেই। আর তখন ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়েছে এর রক্ত। এছাড়া অন্যান্য অনেক ওষুধের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পরীক্ষায় এই রক্তের ব্যবহার হচ্ছে। যার ফলে এই কাঁকড়ার রক্ত অত্যন্ত দামি।

The Life-Saving Blue Blood of the 'Horseshoe Crab' and Its Crucial Role in Medicine"

‘হর্স শু’ ক্র্যাবকে ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ বলা হয় কারণ এটি পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন বছর ধরে টিকে আছে, অর্থাৎ ডাইনোসরদেরও আগে থেকে! এদের মাথায় দুটি বড় চোখ ছাড়াও, শরীরের বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট চোখ রয়েছে যা বিভিন্ন দিক থেকে আলোর উপস্থিতি শনাক্ত করতে সাহায্য করে। হর্সশু ক্র্যাবের স্ত্রী প্রজাতি পুরুষ প্রজাতির তুলনায় বড় আকারের হয়। প্রজননের মরসুমে এরা তীরে এসে প্রায় এক লক্ষ ডিম পাড়ে।

মূলত আমেরিকা ও এশিয়ার কিছু উপকূলবর্তী অঞ্চলে পাওয়া এই কাঁকড়া, যার রক্তের চাহিদা ব্যাপক। তবে বাণিজ্যিকভাবে রক্ত সংগ্রহ ও পরিবেশগত কারণে এদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই এর নির্ভরতা কমাতে বিকল্প রাসায়নিক প্রস্তুতির চেষ্টা চলছে।