HomeOffbeat Newsরান্না পূজা: মহিলাদের হাত ধরেই শুরু হয় বাঙালির এই খাদ্যেৎসব

রান্না পূজা: মহিলাদের হাত ধরেই শুরু হয় বাঙালির এই খাদ্যেৎসব

- Advertisement -

বাঙালির সব পার্বন বা উৎসবের প্রথা পুরোহিত বা সমাজের কর্তা সদৃশ পুরুষদের দ্বারা প্রবর্তিত হলেও একটি পার্বন শুরু হয়েছিল মহিলাদের হাত ধরে এবং তাদের বিধান মেনেই – সেটি হচ্ছে রান্না পূজা।

প্রামাণ্য তথ্য না থাকলেও পরম্পরা থেকে ধারণা স্পষ্ট হয়। নদীমাতৃক গ্রাম বাংলার এ এক নিজস্ব উৎসব। কোথাও বলে ইচ্ছা রান্না, কোথাও বা ধরাটে রান্না বা আটাশে রান্না, আবার কোথাও বলে বুড়ো রান্না। আসলে এ সবই পার্বনপ্রিয় বাঙালির দেওয়া ডাকনাম। মূল প্রতিপাদ্য জমিয়ে হরেক রকম রান্না , না রেঁধে খাওয়া। বিশ্বকর্মা পুজোর পাশাপাশি আজ বাঙালির হেঁশেল বনধ। অরন্ধন’-এর আভিধানিক অর্থ হল অ রন্ধন অর্থাৎ যে দিন রান্না করা হয় না বা রান্না নিষেধ। আর সেই দিনটি তো আজকেই।

   

ভাদ্র সংক্রান্তি বা বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন পরিবারের কল্যাণার্থে গৃহিণীরা শিবের মানসপুত্রী দেবী মনসার উদ্দেশে নানা বিধ পদ রান্না করে নিবেদন করেন। রান্নাপুজোর দিন সাধারণত উনুনের পুজো হয়। সারা বছর আমরা যে উনুনে রান্না করি তার উপাসনা করা হয় এই পুজোয়। অন্য দিকে উনুনের গর্ত হল মা মনসার প্রতীক। তাই দেবী মনসার উদ্দেশে পুজো বোঝাতেই এই উনুন পুজো করা হয়।

Ranna Puja

কিন্তু এর কারণ কী? দেবী মনসা বাংলার লৌকিক দেবদেবীর মধ্যে অন্যতম। ভরা বর্ষা কাটিয়ে যখন সূর্যের আলো ঝলমলে রোদ ভূমি স্পর্শ করে, শীতকালে শীত-ঘুমে যাওয়ার আগে গ্রামাঞ্চলে সাপের আনাগোনা শুরু হয়। চাষ করতে গিয়ে অনেক মানুষের জীবনহানিও ঘটে। তাই দেবী মনসাকে সন্তুষ্ট রাখতে, সংসারজীবনে দেবীর কৃপালাভের আশায় আগের দিনের রান্না করা পান্তা ভাত, সজনে শাক, ভাজাভুজি, ওলের বড়া, মাছের বিভিন্ন ধরনের পদ সাজিয়ে দেবীকে নিবেদন করা হয়। ওই দিন বাড়িতে টাটকা রান্নার নিয়ম নেই।

দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে এই উৎসব রান্নাপুজো বলে পালিত হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই পুজোর জন্য দৈনন্দিন ব্যবহারের উনুন গোবর জল দিয়ে পরিষ্কার করে আলপনা দিয়ে মনসা পাতা দিয়ে সাজিয়ে ঘট প্রতিষ্ঠা করে পুজো হয়।

আরন্ধনের উপকরণ কী? পান্তা ভাত, মুগের ডাল, কচু শাক, লতি চচ্চড়ি, পাঁচ রকম ভাজা, আলু – কুমড়ো নারকেল দিয়ে ছাচি, ইলিশের পাতলা ঝোল, ভাপা ইলিশ আর শেষ পাতে চালতার টক। রসনার তৃপ্তির কথা ভেবে বেশ রসালো ভাবেই শুরু হয়েছিল এই পার্বণের। এখনো গ্রাম বাংলায় অরন্ধনের আগের দিন বাড়ির সকল সদস্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সারা রাত ধরে রান্নার উপচার তৈরি, রান্নাবান্না, কুটনো-বাটনা চলে।

ভাদ্র সংক্রান্তির দিন মা মনসাকে উৎসর্গ করে তবে খাওয়া হয়। গোত্র বা অঞ্চল ভেদে কেউ মনসার মূর্তি বানিয়ে, বা ঘট পেতে বা ফনিমনসার ডাল পুঁতে – মনসার প্রতীক হিসেবে ভেবে পূজা হয়। আগে তিথি অনুযায়ী, সংক্রান্তির দিন ভাদ্র শেষ হয়ে আশ্বিন পড়লে তবে সে খাবার মুখে তুলতেন গৃহস্থ। তাই এই উৎসবকে অনেকে বলেন ভাদ্রতে রান্না করে আশ্বিনে খাওয়া। এই উৎসবের প্রচলন ঘটি এলাকাতেই বেশি। নিজে বাঙাল হলেও কর্মসূত্রে আছি ঘটি প্রধান এলাকায়।

- Advertisement -
online desk
online desk
Get Bengali news updates, Bengali News Headlines , Latest Bangla Khabar, Bengali News from Kolkata
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular