#Shabana Azmi
বিশেষ প্রতিবেদন: ১৯৭৪ সাল, ফিল্মি দুনিয়ায় তাঁর আত্মপ্রকাশ গৃহপরিচারিকার চরিত্রে। ছবির নাম ‘অঙ্কুর, (Ankur) চলচ্চিত্রকার শ্যাম বেনাগাল (Shyam Benegal)। প্রথম ছবিতেই এমন অভিনয় দক্ষতা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray)। অঙ্কুরোদগম সোনার ফসলে পরিণত হওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। অঙ্কুর থেকে সোনাটা ভারতীয় সিনেমাকে এখনও গৌরবান্বিত করে চলেছেন। তিনি শাবানা আজমী (Shabana Azmi)।
কাইফি মহম্মদের মেয়ে, স্বামী জাভেদ আখতার। এই পরিচয়গুলো ছাপিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন অন্য উচ্চতায়। ‘অঙ্কুর’ দেখেই সত্যজিৎ রায় এই বলেছিলেন, “ও হবে ভারতীয় হিন্দি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সেরা অভিনেত্রী,এতে কোন সন্দেহ নেই।” জহুরীরা জহর চেনেন তো। প্রমান, প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার। তিনি কখনও সৌদামিনী,কখনও ইন্দু। সমস্ত কাল্পনিক চরিত্রকে বাস্তব করে তুলেছেন তিনি। তাই তো তিনি ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তি।
প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি অঙ্কুরের সাফল্যের পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সত্তরের দশকেই অভিনয় করেন ‘নিশান্ত’ , ‘জুনুন’, ‘স্বামী’, ‘শতরঞ্জ কা খিলাড়ি’ , ‘একদিন আচানক’ থেকে ‘অমর আকবর এন্থনি’, ‘কর্ম’, ‘ফকিরার’ মত ছবিতে।
আশির দশকে এসে নিজের জমি আরও শক্ত করেন,একের পর এক দুরন্ত ছবিতে নিজেকে অনন্য করে তোলেন। অভিনয় করেন ‘স্পর্শ’, ‘পার’, ‘আর্থ’, ‘নামকিন’, ‘খান্দার’ , ‘মাসুম’, ‘ভাবনা’র মত কালজয়ী ছবিতে। ‘ফায়ার’ ছবিতে অভিনয় করে মৃত্যুর হুমকিও পেয়েছিলেন, কারণ ছবির বিষয় ছিল সমকামিতা। নব্বইয়ের দশকে একজন মহিলা এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করছেন যা নিয়ে তার দেশের মানুষের ধারণাই তৈরি হয়নি। হালে তো অভিষেক বচ্চন-জন আব্রাহাম কমেডির মাধ্যমে সমকামিতাকে তুলে ধরেছেন। তখন তো দেশের মানুষ কিছুটা হলেও জানে সমকামিতা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এরপরে গডমাদার , এমএফ হুসেনের গজগামিনী, নীরজা সহ বেশকিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘স্বামী’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেন শাবানা আজমি। অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে ‘ম্যায় আজাদ হু’তে সাংবাদিক চরিত্রে তিনি ছিলেন অনবদ্য। তেমনি ‘তেহজিব’ ছবিতে তারকা কণ্ঠশিল্পীর ভূমিকাতেও তিনি অসাধারণ। শাবানা আজমি হলিউডের ছবি ‘সিটি অব জয়’ এবং ‘মাদাম সাওসাটজকা’তে অভিনয় করেছেন। মঞ্চ নাটকেও তিনি সফল। অন্যতম ‘তুমহারি অমৃতা’।
শুধু হিন্দি ছবিতে নয়,অন্যান্য ভাষার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। হলিউডের ছবি ‘সিটি অব জয়’,অপর্ণা সেনের বাংলা ছবি ‘সতী’ তেও বুঝিয়েছেন অভিনয় কাকে বলে। বাংলাদেশে নারগিস আক্তারের ‘মেঘলা আকাশ’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন।সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া ছবি ‘সোনাটা’।
বর্নিল ক্যারিয়ারে পদ্মশ্রী পেয়েছেন, পাঁচবার জাতীয় পুরস্কার। ফিল্মফেয়ার তো আছেই। পেয়েছেন আর্ন্তজাতিক পুরস্কার। সমাজকর্মী হিসেবে নিজেকে সুপরিচিত করেছেন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কাজে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে প্রচার কাজের সঙ্গে যুক্ত। শিশু অধিকার রক্ষারও একজন কর্মী তিনি। এইচ আইভি এইডস বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজে তিনি যুক্ত। ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস তাকে রাজ্যসভার সদস্য পদ দেয়। তিনি জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ডের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর। হয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদও। আজ একাত্তরে পড়লেন এই বিখ্যাত অভিনেত্রী।