HomeMythologyবাড়বনিতার পুজো হল আম জনতার, কাটোয়ায় পূজিত হয় ল্যাংটো কার্তিক

বাড়বনিতার পুজো হল আম জনতার, কাটোয়ায় পূজিত হয় ল্যাংটো কার্তিক

- Advertisement -

বিশেষ প্রতিবেদন: কাটোয়ার ইতিহাস কিন্তু প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো কাটোয়ার পূর্ব নাম ছিল “ইন্দ্রানী পরগনা” পরে সেটা পাল্টে “কন্টক নগর” হয়। ১৫১০ সালের জানুয়ারি মাসে শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর গুরুদেব কেশব ভারতীর কাছ থেকে এখানেই দীক্ষা নেন। ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরও আছে কিন্তু সব কাহিনীর মাঝে রয়েছে ল্যাংটো কার্তিকের পুজোও, যা মহাধুমধামে পালিত হয়।

এখানে কার্তিকের “লড়াই” হয়। এবার লড়াই মানে সত্যি সত্যি মারামারি হাতাহাতি নয়। ইতিহাসটা বলছে বহু আগে কাটোয়ার গঙ্গাতীরের কাছে ছিল বারবনিতাদের পল্লী। তাদের আশ্রয়দাতা ছিলেন তখনকার জমিদার,বাবু ও বণিকেরা। বারবণিতারাই প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার আশায় শুরু করেছিল “ল্যাংটো কার্তিকের”পুজো। এই পুজোকে কেন্দ্র করে জমিদার ও বণিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হত। কাল ক্রমে সেই প্রতিযোগিতায় “কার্তিক লড়াই” নামে সুপরিচিত।

   

এখন কার্তিক লড়াই মানে আপনাদের প্রসেশন তাই। আলো ও বিভিন্ন বাজনা নিয়ে শোভাযাত্রা। তবে ল্যাংটো কার্তিক এখনও হয়। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি বেলডাঙা, হুগলির চুঁচুড়া, বাঁশবেড়িয়া, বাঁকুড়ার সোনামুখীর কার্তিকপুজো খুবই নামকরা। তবে কাটোয়ার কার্তিক অন্য মাত্রা পায়। কাটোয়া অতি প্রাচীন শহর। গ্রিক-রোমান লেখকদের রচনায় উল্লিখিত ‘কটদুপা’কে একালের কাটোয়া বলে অনেকেই শনাক্ত করেছেন। তবে শহর কাটোয়ার খ্যাতি শুরু মহাপ্রভুর সন্ন্যাস গ্রহণের পর থেকে। মুর্শিদাবাদে নবাবিরাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে কাটোয়া শুধু মুর্শিদাবাদের প্রবেশদ্বার হয়ে ওঠেনি, ব্যবসা বাণিজ্যে জমজমাট হয়ে ওঠে। নতুন নামকরণ হয় গঞ্জমুর্শিদপুর। ইংরেজ আমলের প্রথম দিকে আবার কাটোয়া শুধু বাণিজ্যেকেন্দ্র নয় – বঙ্গরাজনীতির অন্যতম আখড়া। কারণ পলাশীর যুদ্ধের নীল নক্সাটি প্রস্তুত হয়েছিল কাটোয়াতেই।

Naked Kartik is worshiped in Katwa

কাটোয়ার গঙ্গাতীরে বর্তমান হরিসভাপাড়ার প্রাচীননাম চুনুরিপাড়া। এই পাড়াতেই বাবু, জমিদার আর বণিকদের বিনোদন দেওয়ার জন্য শুরু হয়েছিল কার্তিক পুজো। অন্যকথায়, এখানেই পতিতালয় ছিল আর বনিকরাই ছিল তাদের খরিদ্দার। একসময় ওদের ব্যাবসা চলছিল না, পতিতারা তাই ল্যাংটো কার্তিক পুজো শুরু করে এরপর সমগ্র কাটোয়া শহরে ছড়িয়ে পড়ে এই পুজো।

কাটোয়া মহকুমায় কার্তিক-উপাসনার ইতিহাস অতি প্রাচীন। মঙ্গলকোটের প্রত্নক্ষেত্র থেকে গুপ্তযুগের টেরাকোটা কার্তিকমূর্তি মিলেছে। এই অঞ্চলের রাজাকার্তিক এবং ল্যাংটো কার্তিক আজও গ্রামে গ্রামে পূজিত হয়।

নবদম্পতি বিশেষ করে যাদের এখনো সন্তানাদি হয়নি তাদের বাড়িতে লুকিয়ে দিয়ে আসা হয় একফুট উচ্চতার বাবুকার্তিক। এই কার্তিকের গড়ন বড় বিচিত্র। মাথায় পাগড়ি। হাতে তীরধনুকের পরিবর্তে কদমফুল। গলায় উত্তরীয়। পরনে কাপড়। কটিতে জড়ানো মেখলা। পোষাকি নাম খোকাই-কার্তিক।

<

p style=”text-align: justify;”>কাটোয়ার কাঠগোলা কাশিগঞ্জ পাড়ার ‘বাংরাকার্তিক’ বেশ পুরনো। যোদ্ধা কার্তিক, গঙ্গাতীরবর্তী এই সূত্রধরপাড়ায় আজও অধিকাংশই সূত্রধর সম্প্রদায়েরাই বাস করেন। প্রায় আট ফুট উচ্চতার ময়ূরে চেপে রণংদেহী মূর্তি। বর্তমানে দুপাশে দুটি সখি থাকলেও পূর্বে ছুটন্ত ঘোড়া ছিল। অনেকেই মানত করেন। বাজনা আলো বা সোনার আংটি, চাঁদির মোয়া ইত্যাদি। প্রতিমাশিল্পী পাড়ার সূত্রধরেরা। এই তিনটি প্রাচীন পুজো ছাড়াও সাহেবকার্তিক ,রামকার্তিক, জামাইকার্তিক ইত্যাদি বিচিত্র প্রকারের কার্তিক পুজো আসে। আগে থাকাপুজো হতো বেশ কয়েকটি। এটি বেশ আকর্ষণীয়। এক একটা “থাকা”য় এক একটা পৌরাণিক কাহিনীর কথা বলা থাকে।
কাটোয়ায় পারিবারিক ও সার্বজনীন পুজো মিলিয়ে প্রায় দুশোর বেশি পুজো হয়। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন থিমের পুজো। গোটা শহরটাই রঙিন আলোয় সাজানো হয়। সুদৃশ্য আলোকসজ্জার গেটগুলো দেখার মতো। প্রতিটি পুজোয় আসে তিন থেকে পাঁচ সেট বাজনা। চন্দননগরের আলোর মায়াবি বিন্যাসে, বড় বড় প্যান্ডেলের চমকে, মেলায়, দোকান বাজারে আর লক্ষাধিক জনসমাগমে কাটোয়ার কার্তিক পুজোর যথার্থ পরিচিতি ‘কার্তিক লড়াই’।

- Advertisement -
Rana Das
Rana Dashttps://kolkata24x7.in/
Rana Das pioneered Bengali digital journalism by launching eKolkata24.com in 2013, which later transformed into Kolkata24x7. He leads the editorial team with vast experience from Bartaman Patrika, Ekdin, ABP Ananda, Uttarbanga Sambad, and Kolkata TV, ensuring every report upholds accuracy, fairness, and neutrality.
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular