লবণের আয়নায় মোড়া মরুপ্রান্তরে ‘মৃত’ ট্রেনের কবরের রাজ্য !

শিরোনাম পড়ে কী ভাবছেন (Salar De Uyuni)? লবণেরও আয়না হয় (Salar De Uyuni)? আবার সেই আয়নায় কোনো একটা আস্ত মরুভূমিকে মুড়েও দেওয়া যায়? আর যদি…

World's Largest Salt Flat Unveiling Salar de Uyuni's Secrets

শিরোনাম পড়ে কী ভাবছেন (Salar De Uyuni)? লবণেরও আয়না হয় (Salar De Uyuni)? আবার সেই আয়নায় কোনো একটা আস্ত মরুভূমিকে মুড়েও দেওয়া যায়? আর যদি মুড়ে দেওয়াও যায়, তাহলেও সেখানে ট্রেনের কবরখানা! খুবই অদ্ভুত লাগছে তাই তো (Salar De Uyuni) ?

বলিভিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ‘সালার দে ইয়ুনি’ (Salar De Uyuni) সত্যিই এমন এক অতি অদ্ভুত জায়গা। পৃথিবীর বৃহত্তম সল্ট বেসিন বা লবণাক্ত মরুভূমি হল এই অঞ্চলটি যার আয়তন ১০,৫৮২ বর্গ কিলোমিটার! কলকাতা কর্পোরেশনের অধীনস্থ এলাকার(১৮৫ বর্গ কিলোমিটার ) দশগুণ বড় এই অঞ্চলটি প্রাগৈতিহাসিক যুগে কিন্তু একটি হ্রদ ছিল।

   

 ভূতাত্বিকদের মতে প্রায় চল্লিশ হাজার বছর আগে এখানে, ‘মিঞ্চিন’ নামে একটি বিশাল হ্রদ ছিল! যা পরবর্তীকালে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে শুকিয়ে যায়! কিন্তু আজও সেই হ্রদের স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে এই অঞ্চলে অবস্থান করছে ‘উড়ু উড়ু’ এবং ‘পুপো’ নামে দুটি লেক, আর সঙ্গে দুটি বিশাল লবণাক্ত মরুভূমি যার মধ্যে বৃহত্তম হলো এই সালার দে ইয়ুনি।

চশমার গ্লাসেই কী হবে হাই-ক্লাস ঘুম? চমকে দেওয়া সত্যিটা জানুন!

এই এলাকায় বর্তমানে জমে থাকা নুনের একটা আনুমানিক পরিমাণ শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠতে বাধ্য! এই পরিমাণ আনুমানিক প্রায় ১২ থেকে ১৩ বিলিয়ন টন! নুন ছাড়াও জিপসাম, সোডিয়াম পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের ভান্ডার হিসাবে এই এলাকাটি খনি এলাকা হিসাবে এক সময় খুবই বিখ্যাত ছিল।

তবে আরেকটা কারণেও এই এলাকাটি অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এই অঞ্চলে মাটির নিচে রয়েছে লিথিয়ামের এক বিশাল ভান্ডার! বিশ্বের মোট লিথিয়াম উৎপাদনের আপাতত ৫০ থেকে ৭০ শতাংশই আসে এই অঞ্চলের হাতেগোনা কয়েকটি লিথিয়াম খনি থেকে। আর লিথিয়াম যে বর্তমান জগতে ব্যাটারি এবং বিদ্যুৎ সঞ্চয় সংক্রান্ত প্রযুক্তির  ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তা কম বেশি সবারই জানা।

এবার আপনি ভাবছেন নুন হল, খনিও হল, কিন্তু আয়না কোথায় গেল? সেটাও বলছি। বছরের একটা সময় যখন এখানকার উষ্ণতা অপেক্ষাকৃত বৃদ্ধি পায়, তখন এখানকার নুনের আস্তরণ কিছুটা গলতে শুরু করে, এবং এই গলে যাওয়া নুনে আকাশের প্রতিবিম্ব দেখে সমগ্র এলাকাটাকে যেন একটা বিশাল বড় আয়না বলে মনে হয়।

হিন্দুত্বের জিগির তুলে বঙ্গ-‘যোগী’ হওয়াই লক্ষ্য শুভেন্দুর ?

সেই সময় এখানে পর্যটকদের সংখ্যাও অনেকটা বেড়ে যায়! রাতের অন্ধকারে তারায় মোড়া আকাশ, আর সাদা ধবধবে নুনের প্রান্তরে সেই আকাশের প্রতিবিম্ব, যেন এক অপূর্ব মায়াজগতের সৃষ্টি করে।

নুনে ঘেরা প্রান্তর হলেও, বেশ কিছু উষ্ণ প্রস্রবণ আছে। এখানে ক্যাকটাস জাতীয় কিছু উদ্ভিদের দেখাও মেলে। নির্দিষ্টভাবে কোন পশু পাখি এখানকার বাসিন্দা না হলেও, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে পরিযায়ী পাখিরা এখানে দলে দলে ভিড় জমায়! ফ্লেমিংগোদের খুব পছন্দের জায়গা বলিভিয়ার এই নোনা বেসিন। এছাড়াও প্রায় ৮০ টিরও বেশি প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে এই জায়গাতে।

শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা খনিজ উপাদান নয়, মহাকাশ গবেষণাতেও এই অঞ্চলটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এত বিশাল উন্মুক্ত এবং প্রায় সমতল প্রান্তর-এর সাথে পরিষ্কার আকাশ, গোটা পৃথিবীতে বিরল। আর তাই বিভিন্ন মহাকাশযান, স্যাটেলাইট এমনকি নক্ষত্র বা গ্রহানুর অবস্থান নির্ধারণেও এই জায়গা থেকে গবেষণা করাটা অনেকটাই সহজ হয়ে দাঁড়ায়।

আরেকটা কারণেও এই জায়গাটা অত্যন্ত অদ্ভুত। এই উন্মুক্ত নোনা মরুপ্রান্তরে রয়েছে ট্রেনের এক বিরাট কবরখানা। আসলে ব্যাপারটা হলো, একসময় খনি এলাকা হিসেবে এই জায়গাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, বিশেষ করে জিপসাম এর খনি ছিল প্রচুর, আর সেখানে পরিবহনের জন্য প্রচুর রেললাইন এবং ট্রেনের ব্যবহার হত। কালের নিয়মে এক সময়ে সেই খনিগুলো বন্ধ হয়ে যায় ফলে উন্মুক্ত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকা অব্যবহৃত ট্রেন গুলি এখন রোদে জলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। ফলে অনেক পর্যটকের কাছে, বলিভিয়ার নোনা বেসিনের এই অংশটি ট্রেন-সিমেট্রি নামেও পরিচিত!

পাহাড়, সমুদ্র কিংবা পৃথিবীর জনবহুল নামী শহরগুলো ঘুরতে ঘুরতে আপনি যদি ক্লান্ত হয়ে যান, তাহলে চলে আসতেই পারেন বলিভিয়ার এই সালার দে ইয়ুনির জনমানবহীন নিস্তব্ধ প্রান্তরে। প্রকৃতি তার বিচিত্র জাদুকরী খেয়ালে এখানে যে অপূর্ব এক মায়াজাল রচনা করেছে, তা দেখে অতি বড় বেরসিক মানুষও যে মুগ্ধ হবেন, তা হলফ করে বলাই যায়।