গড়িয়াহাটের ভিড়ে ফুটপাতে বসে প্রণববাবু ভাবছেন, ‘বউ-ছেলেকে…’

গড়িয়াহাটের (Gariahat Market) কোলাহলে হাজারো দোকানের মাঝে এক কোণে নিঃশব্দে বসে আছেন প্রণব বাবু (Pranab Babu)। মুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট মুখে। ৬৫ ছুঁইছুঁই, কপালে চিন্তার…

Local Shop owner Pranab Babu silent struggle During Puja Shopping in Gariahat Market ahead of Durga Puja 2025

গড়িয়াহাটের (Gariahat Market) কোলাহলে হাজারো দোকানের মাঝে এক কোণে নিঃশব্দে বসে আছেন প্রণব বাবু (Pranab Babu)। মুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট মুখে। ৬৫ ছুঁইছুঁই, কপালে চিন্তার ভাঁজ। ফুটপাতে তার ছোট্ট কাপড়ের দোকান, যেখানে সারাদিনে বিক্রি হয় বড়জোর ২০০-৩০০ টাকার জিনিস। দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2025) বাজারে যেখানে চারপাশের শপিং (Puja Shopping) কমপ্লেক্স গুলো রাত দিন কলতানে মুখর, সেখানে প্রণব বাবুর দোকানে (Local Shop) নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা।

শারদ সৃজনী সম্মানে ‘হাউসিং পুজো’কে স্বীকৃতি, দায়িত্বে প্রাক্তন ফুটবলাররা

   

কাকু এই কাপড়টা দেখান তো, বলতেই প্রণব বাবু হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করলেন, ভাই কটা নেবে? আমি বললাম ভালো লাগলে দুটো নেব, বোন আর বান্ধবীর জন্য। তিনি কাপড় দেখাচ্ছেন। আমি হঠাৎ তাকে প্রশ্ন করলাম, কেমন চলছে পুজোর বাজার? তিনি স্তিমিত দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন। তারপর চোখের কোণ মুছতে মুছতে বললেন, “আগে এই সময়টায় দোকানে দাঁড়াতে পারতাম না, এত ভিড় হতো। এখন মানুষ সব কিনছে শপিং মলে আর অনলাইনে। আমাদের মত ছোট দোকানদারদের খোঁজই নিচ্ছে না কেউ।”

কী মন হল আমার প্রশ্ন করেই বসলাম, কাকু বাড়িতে নাতি-নাতনি কতজন? তিনি বলে উঠলেন, “আমরা তিনজনে থাকি। আমি, বউ আর আমার হ্যান্ডিক্যাপড ছেলেটা।” এরপর কিছু জিজ্ঞাসা না করতেই ভারী কণ্ঠে বললেন, “তিন বছর হয়ে গেল বউকে একটা নতুন শাড়ি দিতে পারিনি। পুজোয় ছেলে কিছু বলতে পারে না, কিন্তু তার চোখের ভাষাতেও আমি বুঝতে পারি, বছরে একটা বার অন্তত নতুন জামার আশায় বসে থাকে ও। কিন্তু আমি তো পারি না দিতে।”

রঙিন প্যান্ডেলের শহরে নিউমার্কেটের ফুটপাথে রবিনের সাদা-কালো পুজো!

সেদিন সঙ্গে ছিল আমার বান্ধবী। সে প্রণব বাবুকে বলে উঠল, ‘জ্যেঠু চিন্তা কর না, সব ঠিক হয়ে যাবে। মা আসছে।’ এই শুনে তিনি বললেন, “দোকানে যদি একটু বিক্রি বাড়ত, যদি কেউ আমাদের মতো মানুষগুলোর কথা ভাবত, তাহলে হয়ত আমার বউটাও হাসতে পারত এই পুজোয়, ছেলেটাও নতুন জামা পেত। আর কিচ্ছু চাই না আমি।”

Advertisements

মনে মনে একটা প্রস্তুতি নিয়েই ফেললাম। প্রত্যেকবার তো ঝলমলে শপিং মলে গিয়েই জিনিস কিনি। ওই দেখনদারী সার। সে জামা হোক বা মায়েদের শাড়ি চটক থাকলেও এক বছরের বেশি টেকেনা। মাঝ খান থেকে পকেট ফাঁকা করে বাড়ি আসতে হয়। তার চেয়ে এবারের কেনাকাটি কাকুর দোকান থেকেই করা যাক। আজ পকেটে পয়সা হলেও, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা আমি ছেলেবেলায় বাবার মায়ের হাত ধরে এই ধরণের দোকান থেকেই কেনাকাটি করেছি।

শসায় নতুন রোগের হুমকি! বাংলার কৃষকদের জন্য সতর্কতা ও প্রতিরোধ

তাই কথাটা মনে না রেখে সরাসরি কাকুকে বললাম এবারে তোমার এখন থেকেই মায়েদের শাড়ি কিনব বুঝলে। বোন আর বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওদের চোখের মৃদু হাসি একই সঙ্গে আমায় সম্মতি এবং কুর্নিশ জানাচ্ছে। প্রণব বাবু যেন একটু হতভম্ব। কি যেন একটা ঘটছে তা তিনি ঠাওর করতে পারছেন না। জিনিস কেনা হলে পর টাকা মিটিয়ে বললাম চিন্তা করোনা কাকু তোমার জিনিস ভালো হলে পরিচিত অনেককে তোমার দোকানের ঠিকানা দেব। ফিরে আসছি কি মনে হল পিছনে তাকাতেই প্রণব বাবুর মুখে দেখেছিলাম নিবিড় প্রশান্তি, চোখ টা ছলছল করছে।

Local Shop owner Pranab Babu silent struggle During Puja Shopping in Gariahat Market ahead of Durga Puja 2025