কলার তন্তু দিয়ে ঝুড়ি তৈরি ভারতের দক্ষিণে মাদুরাইয়ের তীরুপারাকুন্দ্রম গ্রামে নারীরা একসময় বর্জ্য বলে বিবেচিত ব্যবহার করা যায় এমন পণ্য তৈরি করতেন। স্বামী জেলে যাওয়ার পর সেলভি এখানে কাজ শুরু করেন। এই আয় দিয়েই তার সংসার চলছে। সেলভি জানিয়েছে, ওই ঘটনার পর আমি কিছুদিন ঘরে একা ছিলাম। তখন আত্মীয়রা সহায়তা করেছিলেন, এরপর তারা সাহায্য বন্ধ করে দেন। দিন দিন আমার সন্তানেরা বড় হচ্ছিল কি করব বুঝে উঠতে পারিনি। এমন দুঃসময়ে আমি এই কাজে ঢুকেছিলাম।
সেলভি ও অন্যান্য নারীরা মাদুরাই ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্ট-এ কাজ করেন। তারা কুড়ি ধরনের চেয়েও বেশি ঝুড়ি তৈরি করতে পারেন। ৫০ ধরণের চেয়ে বেশি হস্তশিল্প বানান। প্রকল্পের লক্ষ্য বিধবা ও একাকী নারীদের মাসিক আয়ের ব্যবস্থা করে তাদের ক্ষমতায়ণ করা। প্রকল্পটি শুরু করেন চার্লস। ছ বছর ধরে এটি চলছে। চালর্স জানাচ্ছেন, যখন ছোট ছিলাম বন্ধুদের হাতে তৈরি উপহার দিতাম। ময়লা সহ গাছের ছাল সবকিছু জোগাড় করতাম সেগুলো দিয়ে ছোট ঘর ও অনেক কিছু বানাতাম। বন্ধুরা সেগুলো পছন্দ করত তখন বুঝেছিলাম প্রকৃতি থেকে যা পাওয়া যায় তা বর্জ্য নয়। এই বোধের কারণে প্রাকৃতিক উপকরণ ও বর্জ্য দিয়ে পণ্য তৈরীর কথা চিন্তা করি আমি।
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো কলা উৎপাদনকারী দেশ। বছরের প্রায় তিন কোটি টনের বেশি উৎপাদন হয়। ভারতের সর্বোচ্চ কলা উৎপাদনকারী রাজ্যগুলির মধ্যে ৪ নম্বরে রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে বছরে প্রায় এক কোটি টন বর্জ্য তৈরী হয়। প্রকল্পের জন্য কলার বর্জ্য আসে কৃষক সেতুর কাছ থেকে। তার প্রায় দু হাজার কলা গাছ আছে। দশ মাসের মধ্যে ফল পাকে। এরপর কলা সংগ্রহের পর পরবর্তী চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে গাছ কেটে ফেলা হয়।
কৃষক সেতু বলছেন, “আগে এগুলো ময়লা ভেবে ফেলে দিতাম কিন্তু এখন এগুলো অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে ঝুড়ি তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদেরও অনেক উপকার হচ্ছে।”
এই ঝুড়ি মূলত ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে রপ্তানি করা হয়। একজন নারী দিনে ৮ থেকে ১০ টি ঝুড়ি তৈরি করেন। এক একটি ঝুড়ি প্রায় দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এক একজন কর্মী দিনে ১৫০ টাকা পান। শুনতে বেশি মনে না হলেও এই শ্রমিকরা বলছে এই আয় তাদের সুখ এনে দিয়েছে। এছাড়াও অন্য সুবিধা রয়েছে।
সেলভি জানান, এখানে যারা কাজ করছেন তারা পরিবার থেকে হয়রানি বা ট্রমার শিকার হয়েছেন এখানে কাজ করায় তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারছেন সন্তানদের সাহায্য করতে পারছেন। আমরা যখন একসাথে কাজ করি তখন আমাদের সব ব্যথা দূর হয়ে যায়। এই নারীরা বলছেন প্রকৃতির কোন কিছুই ফেলনা নয়। তাদের বিশ্বাস তাদের কাজ পরিবেশের উপকার করছে। কিন্তু সেলভির কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই কাজকরায় তার মত নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে সন্তান ও পরিবারকে সাহায্য করতে পারছেন।