ইতিহাসের পাতায় রইলেন, তবুও মনের খাতায় ব্রাত্য রইলেন

আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ ট্র্যাজিক গল্পের নায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। হয়তো একটা আস্ত উপন্যাস কিংবা সিনেমা বানালে মন্দ হয় না। এই বাজারে একটু আলতো সুড়সুড়ি দিলেই দারুন…

hardik pandya created recrod in t20 world cup 2024

আদিত্য ঘোষ, কলকাতাঃ ট্র্যাজিক গল্পের নায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। হয়তো একটা আস্ত উপন্যাস কিংবা সিনেমা বানালে মন্দ হয় না। এই বাজারে একটু আলতো সুড়সুড়ি দিলেই দারুন চলবে। বলা ভাল দৌড়াবে। হার্দিক পান্ডিয়া এই নামটা বিগত কয়েক মাসে বারবার ভেসে এসেছে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে। কখনও খেলার দৌলতে আবার কখনও ব্যক্তিগত জীবনের ঘষাঘষিতে। দুই ক্ষেত্রেই হার্দিকের মুখে লেগে ছিল হাসি। প্রচণ্ড চাপের মুখেও তাঁর ক্ষেত্রে দেখা যায়নি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। তিনি সমঝে চলেছেন। মাথা ঠাণ্ডা রেখেছেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে যেন কিছু একটা বলেছেন। সর্বদা হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াতে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছেন। জীবনের চরম খারাপ মুহূর্তেও হেরে যাননি। নিজেকে নিজের চেয়ে আরও উপরে নিয়ে গিয়ে এক অদ্ভুত পরিসরে প্রমাণ করেছেন। ‘ছাপড়ি’ থেকে বিশ্ববিজেতা হয়ে উঠেছেন।

কম্পিউটার খুললেই নীল-স্ক্রিন! বিশ্বজুড়ে পণ্ড কাজ, প্রভাব ভারতেও, কী হল?

   

এই সেই বরোদার কালো ছেলেটা, যিনি নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাবাকে হারিয়েছেন। দেশের সেরা অলরাউন্ডডার থেকে হারিয়ে যেতে যেতে আবার ফিরে এসেছেন। দেশকে বিশ ওভারের বিশ্বকাপ দিয়েছেন। তারপরেও তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের ফাঁকফোকড় দিয়ে বেরিয়ে এসেছে খবর। যে দিন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারতীয় দল ঘোষণা হল, সেইদিনই তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানালেন যে তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এইদিনই তাঁকে ভারতীয় দলের সহঅধিনায়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। প্রসঙ্গত তাঁকেই ভারতীয় দলের পরবর্তী বিশ ওভারের অধিনায়ক হিসেবে ভাবা হচ্ছিল।

এক নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি, তিন নম্বরে হাফসেঞ্চুরি, তবুও গম্ভীরের টিম ইন্ডিয়ায় হল না জায়গা

কিন্তু সে আর তাঁর কপালে জুটল না। তবুও তিনি চুপ রইলেন। শুধু তাই নয়, সেই একই দিনে তাঁর বহু চর্চিত বিবাহিত জীবনের বিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করলেন তাঁর স্ত্রী নাতাশা। তবুও তিনি চুপ রইলেন। কয়েকমাস আগের কথা। ভারত এবং সাউথ আফ্রিকা ফাইনাল ম্যাচ চলছে। প্রোটিয়া বাহিনী প্রায় ম্যাচ বের করে নিয়ে যাবে, এই অবস্থায় বোলিং করতে এলেন তথাকথিত ছাপড়ি হার্দিক। অনেক ভারতীয় সমর্থক টেলিভিশন অফ করে দিয়েছিলেন। আবার অনেকে বলেছিলেন, ” আর কেউ বল করার ছিল না?” সেই মুহূর্তে প্রোটিয়া বাহিনীর ক্লাসেন বেধড়ক মারছেন ভারতীয় বোলারদের। হার্দিকের প্রথম বলে ব্যাটের কোণায় লেগে পান্থের গ্লাভসের বল গেল। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল ভারতীয় সমর্থকরা। ওটাই ছিল টারনিং পয়েন্ট। সারা বিশ্বকাপে ১৪৪ রান এবং ৮ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে তিনি নিজেকে প্রমাণ করলেন। তবুও সেই উন্মাদনা নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রাখেলন।

প্রসঙ্গত গত আইপিএলে তাঁকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-এর অধিনায়ক করায় বিতর্ক দানা বাঁধে। রোহিতের সঙ্গে তাঁর মতোবিরোধও শুরু হয় বলে খবর। এইবার আইপিএলে হতশ্রী ফলাফলের পর অনেকে করেছিল তাঁর ভবিষ্যতে ক্রিকেটীয় জীবনে কোপ পড়তে পারে। ইদানীং কিছুদিন ধরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বহু খবর পাওয়া গিয়েছিল। কানে ভাসছিল তাঁর বিচ্ছেদের জল্পনা। কিন্তু এত কিছুর পরেও তিনি তাঁর লক্ষ্যে অবিচল। কর্মে স্থির। এই ছেলেটাই গুজরাট টাইটানস থেকে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। এই ছেলেটাই ছাপড়ি থেকে বিশ্ব খেতাবের শীর্ষে উঠেও ট্র্যাজিক নায়কের মতো হয়ে রইলেন। ইতিহাসের পাতায় রইলেন। তবুও মনের খাতায় ব্রাত্য রইলেন।