‘বিচ্ছেদই শেষ কথা? শেষ কথা কেউ কি জানে?’

আদিত্য ঘোষ, কলকাতা: বিবাহবিচ্ছেদ (Divorce) এখন চলতি জীবনের খুব সাধারণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আগের মতো বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে ট্যাবু নেই। লোকে এখন খোলাখুলি বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে কথা…

divorce

আদিত্য ঘোষ, কলকাতা: বিবাহবিচ্ছেদ (Divorce) এখন চলতি জীবনের খুব সাধারণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আগের মতো বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে ট্যাবু নেই। লোকে এখন খোলাখুলি বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে কথা বলতে ভালবাসেন। শুধু তাই নয়, এই যুগে বিবাহবিচ্ছেদকে রীতিমত সেলিব্রেট করা হয়। বেশ কিছুদিন আগে একটা খবর চোখে পড়েছিল, এক বাবা তাঁর মেয়েকে বিবাহবিচ্ছেদ মামলা শেষ করে ঢাকঢোল বাজিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে আনলেন। এইরকম খবর ইদানীং দেখা গেলেও আজ থেকে কুড়ি বছর আগেও এইসব ঘটনা খুব বিরল। বিবাহবিচ্ছেদ এখন জলভাতের মতো হয়ে উঠেছে। অন্তত মখমলে পর্দায় এইসব জলভাতই ছিল। তবে আমজনতার কাছে এখন বিবাহবিচ্ছেদ পাড়ার দোকানে গিয়ে বিরিয়ানি কেনার চেয়েও সহজ।

দীর্ঘদিনের বান্ধবীকে বিয়ে করলেন সৌরভের দাদা স্নেহাশিস

   

সম্প্রতি ক্রিকেটার হার্দিক পান্ডিয়ার বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। এছাড়াও বাংলা সিনেমা জগতের বেশ কয়েকটি জুটির মধ্যে ভাঙন আসন্ন বলে খবর। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি জুটির সম্পর্কের গভীরতা রীতিমতো প্রবল বলেই চাউর ছিল ঘনিষ্ঠমহলে। কিন্তু সেই গভীরতা নিমেষে ধুয়ে যাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। শুধু রঙিন পর্দা কেন? এর বাইরেও আমজনতার মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা বেড়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর তথ্য। ৪০ শতাংশ লাভ ম্যারেজই বিবাহবিচ্ছেদের দিকে এগোচ্ছে। ২৮ শতাংশ অ্যারেঞ্জ ম্যারেজও সেই কোর্টে গিয়ে মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু কেন এই বিচ্ছেদ? মনোবিদ অরিত্রিকা সেনের বক্তব্য অনুসারে, ‘এই বিষয়টা বিশাল একটা ব্যাপার। কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে বলা সম্ভব নয়। তবে এই যুগে বিবাহবিচ্ছেদের হার বেড়েছে, এটা ঠিক। কোথাও গিয়ে মেয়েরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। এটাও একটা কারণ হতে পারে। আগের মতো মার খেয়ে মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে থাকে না।’

আমরা কি দিনে দিনে অসহিষ্ণু উঠে উঠেছি? প্রশ্ন আছে, উত্তর নেই। নাকি আমরা একই বস্তুর প্রতি বেশিদিন আকৃষ্ট থাকতে পারছি না? একই মানুষের প্রতি মনোনিবেশ করতে গিয়ে বিরক্ত হয়ে উঠছি? মনোবিদ অরিত্রিকার কথায়, ‘সমাজমাধ্যম একটা বড় রোল প্লে করছে। আমরা এখন অনেক সহজেই অনেককিছু হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছি, সেটাও একটা কারণ হতে পারে।’ তাই কি? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসরকারী সংস্থার মহিলা কর্মীর কথায়, ‘আমি নিজে উপার্জন করি, কাউকে জবাব দিতে ইচ্ছুক নই। যেদিন পোষাবে না বিবাহিত জীবন ছেড়ে বেরিয়ে আসব।’ সদ্য বিয়ে হওয়া এক যুবকের কথায়, ‘ আজকাল আমরা ঝামেলা মিটিয়ে নিতে খুব একটা আগ্রহী নই।’ সত্যি কি তাই? বিয়েই কি একটা সম্পর্কের পরিণতি হতে পারে নাকি বিবাহবিচ্ছেদই সবকিছুর ইতি টানতে পারে? একটুকরো ঠুনকো জীবনে কি একটা বিয়ে বা বিবাহবিচ্ছেদ প্রভাব ফেলতে পারে?

কারা হাজির ছিলেন মির্জাপুরের তৃতীয় সিজেনের সাকসেস পার্টিতে? দেখুন ছবিতে

উত্তরের হদিশ মন জানে। মনের হদিশ প্রেম জানে। প্রেমের হদিশ জীবন জানে। যদি ধরেও নেওয়া যায় বিবাহবিচ্ছেদ শান্তি দিতে পারে, তাহলে তাই শ্রেয়। অনেক যুগল বিবাহবিচ্ছেদের পরে ভাল আছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ঘুরেফিরে সেই একই প্রশ্ন থাকছে, কেন এই বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা? মনোবিদের কথায়, ‘এই প্রবণতা আদৌ সমাজকে কোন দিকে নিয়ে যাবে সেটা বলা মুশকিল।উপরন্তু কেনই বা এই বিবাহবিচ্ছেদের হার বেশি, সেটারও উত্তর নেই। তবে এটাকেই নিউ নর্মাল ধরা যেতে পারে।’

এরপরেও সেই নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লাইন থেকে ধার করে বলতে হয়,’বিচ্ছেদই শেষ কথা? শেষ কথা কেউ কি জানে?’ এই যুগে যখন বিয়েকে সেলিব্রেট করা হচ্ছে ঠিক একই সময়ে ডিভোর্সকেও সেলিব্রেট করা উচিত। না হলে এই বিংশ শতাব্দীর উল্লাস কোথায়? বিয়ের পরেও জীবন আছে, বিয়ের আগেও আছে। বিয়ে ভাঙার পরও আছে।