এক নজিরবিহীন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে, ত্রিপুরার ইউটিউবার অনির্বাণ ভৌমিক (Anirban Bhowmik) অসংখ্য বন্যাকবলিত পরিবারের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি ত্রিপুরার ভয়াবহ বন্যায় হাজার হাজার মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, অনেকে তাদের প্রাণ, ঘরবাড়ি, ও জীবিকা হারিয়েছেন। যখন জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তখন হতাশাও বাড়ছিল, কিন্তু সেই অন্ধকারের মধ্যে অনির্বাণের আলো উজ্জ্বলভাবে জ্বলছিল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্যার ভয়াবহ ছবি ও ভিডিও দেখে, অনির্বাণের মনে এক তীব্র অপরাধবোধ জন্মায়। তিনি বলেন, “যখন মানুষ মারা যাচ্ছে এবং সবকিছু হারাচ্ছে, আমি তখন ঘরের মধ্যে স্বচ্ছন্দে বেঁচে আছি। আমি আজ যেটাই আছি সেটা একমাত্র ত্রিপুরার মানুষের জন্য। আর আজ তাদের কষ্ট দেখে আমার ভেতরে অপরাধবোধ কাজ করেছে।”
এই গভীর অপরাধবোধ এবং তার সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করে, অনির্বাণ চুপচাপ বসে থাকতে পারেননি। সাঁতার না জানার পরেও, তিনি ঘাড় পর্যন্ত জলের মধ্য দিয়ে হেঁটে পৌঁছেছেন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে এবং খাবার, পানীয় জল, জামাকাপড়, ওষুধ, এবং স্যানিটারি প্যাডের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিতরণ করেছেন। তিনি বলেন, “আমি আমার সমস্ত সঞ্চয় ব্যয় করেছি সেই মানুষদের জন্য যারা আমার যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপে আমাকে সমর্থন করেছে।”
View this post on Instagram
যখন তার তহবিল ফুরিয়ে আসতে লাগল, এবং দুর্যোগের পরিমাণ আরও প্রকট হয়ে উঠল, তখন অনির্বাণ তার অনুসারী এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের কাছে সমর্থনের আবেদন জানান। সাড়া পাওয়া গেলেও, সেই সমর্থন বিপুল চাহিদার সামনে ছোট হয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই “দ্য বং গাই” নামে পরিচিত কিরণ দত্ত তাকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। কিরণ তাকে জানিয়ে দেন, “অনির্বাণ, তুমি দারুণ কাজ করছ, ভাই। এগিয়ে যাও। আমি তোমার পাশে আছি,” এবং তার কথার সাথে সাথে ২০,০০০ টাকার অনুদানও পাঠান।
নবউদ্দীপ্ত মনোবল ও সমর্থন নিয়ে, অনির্বাণ অবিরামভাবে ৮ থেকে ১০ দিন ধরে কাজ চালিয়ে যান, তার নিজের স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করে তার জনগণের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেন। বর্তমানে অসুস্থতার কারণে কিছুটা বিশ্রাম নিচ্ছেন, কিন্তু তার অঙ্গীকার অটুট রয়ে গেছে। তিনি বলেন, “এই মানুষগুলো আমাকে সবকিছু দিয়েছে, আর এখন আমার পালা তাদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার। তারা কখনও কিছু চাইনি, তাই আমি আমার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি।”
অনির্বাণ ভৌমিকের এই কর্মকাণ্ড আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে একজন ব্যক্তির কতটা প্রভাব থাকতে পারে। ইউটিউব তারকা থেকে বাস্তব জীবনের নায়ক হয়ে উঠার তার এই যাত্রা শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত রূপান্তরের গল্প নয়, এটি সমাজের শক্তি এবং সংকটের সময়ে একে অপরের প্রতি মানুষের বন্ধনের প্রমাণ।