কেন পালিত হয় মহাশিবরাত্রি? জানুন শিবের ঐশ্বরিক কাহিনি

হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসব মহাশিবরাত্রি (Maha shivratri)। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পুজো করা হয়। এই দিনটি বিশেষভাবে ভগবান শিবের…

Why is Maha Shivaratri Celebrated? Discover the Divine Story of Shiva

হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসব মহাশিবরাত্রি (Maha shivratri)। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পুজো করা হয়। এই দিনটি বিশেষভাবে ভগবান শিবের উপাসনার জন্য নির্ধারিত। শিব ভক্তরা সারা রাত ধরে উপবাস, জপ এবং পূজা করেন। শিবরাত্রি মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত: মাসিক শিবরাত্রি এবং মহাশিবরাত্রি। কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিকে মহাশিবরাত্রি বলা হয়। এই দিনটি শিবের পূর্ণতার সাথে সম্পর্কিত। হিন্দু ধর্ম মতে শিবের আশীর্বাদ ও সৌভাগ্য লাভের জন্য এই দিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 

মহাশিবরাত্রি (Maha shivratri) হল সেই দিন যখন ভগবান শিবের ত্যাগ, তপস্যা এবং সাধনার গুরুত্ব সর্বাধিক। শিবরাত্রি একটি আধ্যাত্মিক উপলক্ষ যেখানে শিবের পূর্ণ অবতারকে পূজা করা হয়। নানা হিন্দু পুরাণে মহাশিবরাত্রির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। মহাশিবরাত্রি হল সেই রাত যখন শিব তার সৃষ্টির প্রথম আকার ধারণ করেছিলেন এবং একে একে তিনি পুরো বিশ্বকে তার উপাসনায় পূর্ণ করেন। এই বিশেষ দিনে ভক্তরা ভগবান শিবের দর্শন লাভের জন্য একাগ্রচিত্তে উপবাস ও পূজা করে থাকেন।

   

মহাশিবরাত্রি (Maha shivratri) উদযাপনের মাধ্যমে ভক্তরা শিবের আশীর্বাদ লাভ করতে চান। যা তাদের জীবনে সুখ, শান্তি এবং ঐশ্বর্য এনে দেয়। এই রাতের বিশেষ গুরুত্ব হল, এই রাতে মানুষ নিজের সমস্ত পাপ ও ত্রুটি থেকে মুক্তির জন্য তপস্যা করেন, শিবের নাম জপ করেন এবং শিবলিঙ্গের পূজা করেন।

মহাশিবরাত্রির (Maha shivratri) ইতিহাস বহু পুরাণে বর্ণিত হয়েছে। প্রধান কাহিনী অনুযায়ী, মহাশিবরাত্রি সেই রাত, যখন শিব নৃত্য শুরু করেছিলেন। পুরাণ মতে, একসময় গোটা পৃথিবী অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। তখন শিব তার মহাযোগী নৃত্য শুরু করেছিলেন যা পৃথিবীজুড়ে আলোর সঞ্চারণ করেছিল এবং সমস্ত দুষ্ট শক্তির বিনাশ ঘটেছিল। এই দিনটি শিবের শক্তি, সৃষ্টির প্রেরণা এবং মহাশক্তির মহাকাব্যিক রাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

আরেকটি পুরাণ মতে, মহাশিবরাত্রি (Maha shivratri) সেই রাত, যখন শিব এবং পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। এই দিনটি শিব এবং পার্বতীর মিলনের পুণ্যতম রাত হিসেবে পরিচিত। সেই সময় শিব তার দেবত্বের প্রকাশ ঘটান এবং পৃথিবীকে নিজের অঙ্গীকারে পূর্ণ করেন। এই রাতে শিব তার ভক্তদের আশীর্বাদ দেন এবং তাদের জীবনের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট ও সমস্যা দূর করেন।

মহাশিবরাত্রি পালন করার জন্য শিবভক্তরা রাতভর উপবাস ও জপ করেন। এদিন শিবলিঙ্গে জল,দুধ,মধু,ফল,ফুল,গঙ্গা জল ইত্যাদি দিয়ে পূজা করা হয়। শিবের মন্ত্র ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ অত্যন্ত পবিত্র। এই মন্ত্রের জপের মাধ্যমে শিবের আশীর্বাদ লাভ করা যায়। শিবের আশীর্বাদ লাভের জন্য অনেকেই উপবাস করে থাকেন এবং তারা শিবের মহাকাব্যিক শক্তির অনুভব করেন।

শিবের শরণে আসা প্রতিটি ভক্ত তার দুর্ভাগ্য ও পাপ থেকে মুক্তি পায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এই রাতে, শিব ভক্তরা শিবের আরাধনায় নিমগ্ন থাকেন, যাতে তারা শিবের আশীর্বাদ লাভ করতে পারেন এবং নিজেদের জীবনে সুখ, শান্তি এবং ঐশ্বর্য এনে দিতে পারেন।

মহাশিবরাত্রি শুধু ধর্মীয় উৎসবই নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উদযাপনও। সারা দেশে এই দিনটি উপলক্ষে বিশেষ মেলা, ধর্মীয় আলোচনা, কীর্তন ও পুজা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। নানা মন্দিরে ভক্তরা জমায়েত হয়ে শিবের নামধ্বনি করেন। এই দিনটি একটি বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়। শিবরাত্রি উৎসবে এবং ধর্মীয় ঐক্যের এক সুন্দর প্রদর্শন ঘটে।

মহাশিবরাত্রি শুধুমাত্র ধর্মীয় উপাসনা নয়, এটি আত্ম-উন্নতি এবং আত্মবিশ্বাসের উৎসবও। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, শিবের আশীর্বাদে তারা সমস্ত সমস্যা ও বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হবেন।

মহাশিবরাত্রি হিন্দু ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব যা শিবের আধ্যাত্মিক শক্তি, শান্তি এবং আশীর্বাদ লাভের জন্য উদযাপিত হয়। এই রাতটি শিবের তপস্যা, সাধনা এবং ঐশ্বর্যের উৎসব হিসেবে পরিচিত। এটি একদিকে শিবের পূর্ণতার প্রকাশ, আবার অন্যদিকে শিবভক্তদের জন্য এটি একটি পবিত্র সুযোগ। আপনি এই বিশেষ দিনে শিবের আশীর্বাদ লাভ করতে পারেন এবং নিজেদের জীবনকে সুন্দর ও সফল করতে পারেন।