ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বহু পুরাতন এবং আশ্চর্যজনক শিব মন্দির রয়েছে, তার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে রাজস্থানের ধৌলপুর জেলার অচলেশ্বর মহাদেব মন্দির। এটি এক বিশেষ ধরনের শিবলিঙ্গের জন্য বিখ্যাত, যার রং দিনে তিনবার বদলাতে থাকে। এই অদ্ভুত ঘটনা মন্দিরের গাঢ় ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক মহিমার সাক্ষী।
অচলেশ্বর মহাদেবের শিবলিঙ্গটি পুরাণ এবং কিংবদন্তির সাথে জড়িত। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এটি দ্বাপর যুগের একটি শিবলিঙ্গ, এবং এখানে কালীয়াবল অসুরের দাপট ছিল। বিশেষত্ব হল, শিবলিঙ্গটি দিনে তিনবার ভিন্ন রঙ ধারণ করে—সকালবেলা প্রথম সূর্যের কিরণের সাথে এটি লাল রঙ ধারণ করে, দুপুরে এটি সোনালী বা জাফরানি রঙ ধারণ করে এবং সন্ধ্যার দিকে এটি ধীরে ধীরে কালো হয়ে যায়। এই পরিবর্তনের কারণ এখনও জানা যায়নি, এবং বিজ্ঞানীরা পর্যন্ত এর কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তবে, এটা ভক্তদের কাছে এক অদ্ভুত প্রাকৃতিক রহস্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
এই মন্দিরের ইতিহাস আরও গভীরে চলে যায়। বলা হয়, এই স্থান এক সময় মুনি-ঋষিদের তপস্থলী ছিল, পরবর্তীকালে এটি যৌলগড়ী নগরীতে পরিণত হয় এবং এরপর ধ্বংস হয়ে যায়। আজও সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরীর স্মৃতিচিহ্নগুলোর মধ্যে অচলেশ্বর মহাদেব একমাত্র জীবিত সাক্ষী। স্থানটি বর্তমানে চম্বল নদী অঞ্চলে অবস্থিত এবং একসময় এটি ছিল এক বিপজ্জনক এলাকা, যেখানে তস্কর, দস্যু এবং বিষধর সাপের উৎপাত ছিল। তবে বর্তমানে পথ-ঘাটের উন্নতির ফলে এটি পর্যটকদের কাছে আরও পৌঁছানোর সহজ হয়েছে।
অচলেশ্বর মহাদেবের শিবলিঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর নীচের অংশের রহস্য। বহুবার চেষ্টা করা হয়েছে শিবলিঙ্গের নীচে পৌঁছানোর জন্য, তবে আজ পর্যন্ত কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। খনন কাজের পরও, শিবলিঙ্গের গভীরে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, যা এই মন্দিরের রহস্যময়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই মন্দিরের আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার হল, এখানে করা বিবাহের মানত কখনো বিফলে যায় না। অনেক ভক্ত বিশ্বাস করেন যে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে বিবাহের জন্য সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছেন বা যাদের সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে, তারা যদি এখানে প্রার্থনা করেন, তবে তাদের বিবাহের বাধা দূর হয়। যারা অবিবাহিত, তারা যদি এখানে এসে প্রার্থনা করেন, তাদের পছন্দের সঙ্গী পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
অচলেশ্বর মহাদেব মন্দির শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি একটি অজানা শক্তির কেন্দ্র যেখানে ভক্তরা তাদের সব মনোবাসনা পূর্ণ করার আশায় আসেন। শিবের এই আশ্চর্য শক্তির প্রতি অগাধ বিশ্বাস রয়েছে ভক্তদের মধ্যে। যদি আপনি কখনো ধৌলপুর এলাকায় আসেন, তবে অচলেশ্বর মহাদেবের মন্দিরে মানত করতে ভুলবেন না।