Mithology: দেবী প্রচ্ছন্ন ছলে ডাকাতদের নরমুণ্ড ফেলার কুয়োর মধ্যে থাকতেন

১৫৫৮ সাল। দিল্লি থেকে তখন ভারত শাসন করছেন সম্রাট আকবর। কলকাতা মহানগরী তখন লুকিয়ে ছিল সুদূর ভবিষ্যতের গর্ভে। উত্তর কলকাতার আজকের কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রীট তখন…

pute-kali

১৫৫৮ সাল। দিল্লি থেকে তখন ভারত শাসন করছেন সম্রাট আকবর। কলকাতা মহানগরী তখন লুকিয়ে ছিল সুদূর ভবিষ্যতের গর্ভে। উত্তর কলকাতার আজকের কালীকৃষ্ণ ঠাকুর স্ট্রীট তখন চিল গঙ্গার এক সুগভীর খাল এবং চারিপাশ ছিল জঙ্গলে ভর্তি। দেবী নাকি তখন প্রচ্ছন্ন ছলে ডাকাতদের নরমুণ্ড ফেলার জন্য ব্যবহৃত একটি কুয়োর মধ্যে।

রাজা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামে সে সময়কার এক বিখ্যাত তান্ত্রিক সাধক এখানে পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করে মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই সাধকের আদি বাড়ি ছিল হুগলী জেলার ভুরশুটো গ্রামে। বর্ধমানের তৎকালীন মহারাজার দুরারোগ্য শ্বেতী সারিয়ে দিলে মহারাজা তাঁকে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং লক্ষ ব্রাহ্মণ ভোজন করান। দেবীর বর্তমান সেবাইতরা রাজা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌহিত্র বংশ।

   

দেবীর শিলাময়ী মুর্তিটি ক্ষুদ্রকার। মাত্র ৬ ইঞ্চি পরিমিত উচ্চ। সম্ভবত এ কারণেই লোকে দেবীকে পুঁটি কালী বলে অভিহিত করত। পুঁটি অর্থে ছোট মেয়ে বোঝায়। ক্রমে পুঁটি কথাটি চলতে চলতে পুঁটে হয়ে গেছে।

তবে এ সম্পর্কে একটি অলৌকিক ঘটনাও আজও মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। লোককথাটি খানিকটা এই রকম। রাজা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক উত্তর-পুরুষ খেলারাম বন্দ্যোপাধ্যায় এক দিন হোমযজ্ঞ করার সময় সামনের খাল থেকে নাকি একটি পুঁটি মাছ আকস্মিকভাবে হোমাগ্নির মধ্যে এসে পড়েছিল। সাধক খেলারাম সেই পোড়া মাছটিকে আবার জলে ফেলে দিতেই সেটি নাকি দেবীর কৃপায় পুনর্জীবন লাভ করে। সেই থেকেই দেবী ‘পুঁটি’ কালী নামে বিখ্যাত। ‘পুঁটি’ থেকে অপভ্রংশ হয়ে ‘পুঁটে’। পরবর্তীকালে রাজপথ তৈরি করার সময় মন্দির ভেঙে ফেলে দেবীকে স্থানান্তরিত করার জন্য ব্রিটিশ সরকার থেকে চাপ সৃষ্টি করলে ব্যাপারটা নাকি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ইংরেজ সরকার ধর্মের উপর হস্তক্ষেপ করে দেবীকে স্থানান্তরিত করতে পারেনি। সম্ভবত বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে মন্দির পুনরায় সংস্কার করা হয় এবং মন্দির বর্তমান রূপ নেয়।

দেবীর ভক্তদের জন্য প্রতি অমাবস্যায় পাঁঠাবলি ছাড়াও প্রতিবছর কালীপূজার দিন আগে একটি করে হরিণ বলি দেওয়া হত। দেবীর বহু অবাঙালি নিরামিষাশী ভক্ত আছেন। তাঁদের জন্য নিরামিষ ভোগের আয়োজন করা হয়ে থাকে। দেবীত ফুলের সাজ অতি মনোরম – মন্দির ছোট হলেও মাটির নীচে একটি তল আছে। মায়ের মূর্তির কাছে একই বেদীতে শ্বেত পাথরের একটি শীতলা দেবীর মূর্তিও প্রতিষ্ঠিত আছে।