ধুতরা, আকন্দ নয়, জানেন কোন ফুল ভগবান শিবের সবচেয়ে প্রিয়?

কেন শ্রাবণ মাস শিবের প্রিয়? শ্রাবণ মানেই ভগবান শিবের মাস। বাংলা ক্যালেন্ডারের এই মাস দেবাদিদেবের প্রতি উৎসর্গকৃত। পুরাণ মতে, প্রথমত, এই মাস থেকেই এই শ্রাবণমাসে…

know about favourite flower of lord shiva , ধুতরা, আকন্দ নয়, জানেন কোন ফুল ভগবান শিবের সবচেয়ে প্রিয়?

কেন শ্রাবণ মাস শিবের প্রিয়? শ্রাবণ মানেই ভগবান শিবের মাস। বাংলা ক্যালেন্ডারের এই মাস দেবাদিদেবের প্রতি উৎসর্গকৃত। পুরাণ মতে, প্রথমত, এই মাস থেকেই এই শ্রাবণমাসে সমুদ্রমন্থন হয়েছিল, উঠে এসেছিল গরল। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে রক্ষা করতে দেবাদিদেব পান করেছিলেন সেই গরল। বিষ পান করে মহাদেবের গায়ের রঙ হয়ে গেছিল নীল। তাই শিবের আর এক নাম নীলকণ্ঠ। মহাদেবকে সেই বিষের জ্বালা থেকে শান্তি দিতে পার্বতী নিজের স্তনদুগ্ধ পান করিয়েছিলেন। দেবতারা পবিত্র গঙ্গাজলে তাঁকে স্নান করিয়েছিলেন। সেই কাহিনি স্মরণে রেখেই পুরো শ্রাবণমাস মহাদেবকে দুধ জলে স্নান করান ভক্তরা।

দ্বিতীয়ত, শিব তাঁর শ্বশুরমশাই দক্ষরাজাকে কথা দিয়েছিলেন একমাস তাঁর বাড়িতে থাকবেন এবং দক্ষরাজের নামে বিশেষ শিবপুজোর প্রচলন হবে। কোনও এক শ্রাবণমাসে তিনি পার্বতীকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেয়েছিলেন এবং একমাস ছিলেন। এর পরেই দক্ষশিবের পুজো চালু হয়েছিল। হরিদ্বারের কাছে কনখলে দক্ষদেবের মন্দির এখনও আছে। এই কারণেই শ্রাবণমাসকে শিবের আরাধনার মাস।

   

কোন ফুল শিবের সবচেয়ে প্রিয়? সাধারণত, শিবপুজোয় রঙিন ফুল অর্পণ নিষিদ্ধ। মূলত, আকন্দ, ধুতরা, শ্বেত কল্কে দিয়ে শ্রাবণে পুজো করা হয়। এইসব ফুল শিবের খুব প্রিয় বলে বিবেচিত। প্রচলিত আছে যে, এক বছর নিষ্ঠাভরে একাদশীর ব্রত পালন করলে যে ফল হয়, ভক্তিভরে মাত্র একটি ধুতরা ফুল শিবলিঙ্গে অর্পণ করলে তার সমতুল্য ফল প্রাপ্তি ঘটে।

কিন্তু জানেন কি, শিবের সবচেয়ে প্রিয় ফুল হল ধুতরা বা আকন্দ নয়! তাহলে কোন ফুল দেবাদিদেবের প্রিয়? উত্তর- বেলগাছের ফুল। তবে, ভুল করেও এই ফুলকে সুগন্ধী বেল ফুলের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। এই ফুল দুর্লভ না হলেও নানা কারণে অবশ্যই সংগ্রহ করা কঠিন।

বিল্বপুষ্প নিবেদনের মাহাত্ম্য? শিবলিঙ্গে বেল গাছেপ ফুল নিবেদনের মাহাত্ম্য শুনলে অবাক হতে হয়। সারা জীবন কঠোর তপস্যা করেও সাধকেরা যা লাভ করতে পারেন না, মাত্র একটা বিল্বপুষ্প ভক্তিভরে শিবলিঙ্গে অর্পণ করলে তাই হয়। পুরাণকথা অনুযায়ী, কোনও ভক্ত যদি তাঁর গোটা জীবনে মাত্র একটিও বিল্বপুষ্প শিবলিঙ্গে অর্পণ করতে পারেন, তাহলে মহাদেবের প্রীতির ফলে সেই ব্যক্তি দেহান্তে শিবলোক লাভ করেন।

শিবঠাকুর কীসে তুষ্ট হন? মহাদেব খুব অল্পে তুষ্ট হন। তাই অতিরিক্ত আয়োজনের দরকার নেই। টাটকা বেলপাতা, আকন্দফুলের মালা, ধুতরো ফুল, কলকে ফুল আর শ্বেতচন্দন দিয়ে শিবলিঙ্গকে সাজালে খুব খুশি হন দেবতা। এছাড়া গাঁদাফুল ও যে কোনও সাদা সুগন্ধী ফুল মহাদেব পছন্দ করেন। নৈবেদ্যে ফলমূল ও মিষ্টান্ন নিবেদন করলেই শিবঠাকুর খুশি। মন্দিরে মন্দিরে শিবের প্রিয় পরমান্ন ভোগ দেওয়া হয়। তবে মহাদেব সন্তুষ্ট হন ভক্তের আন্তরিক নিবেদনে, ভক্তিতে।

শ্রাবণে শিবের ব্রতপালনের নিয়ম কী কী?

– শ্রাবণের প্রতি সোমবার সকালে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরে শিবের আরাধনায় বসতে হবে।
– যাঁরা উপবাস করতে পারেন না তাঁরা সোমবার নিরমিষ খাবেন।
– বেলপাতা শিবের অতি প্রিয়। ২১টি বেলপাতায় শ্বেতচন্দন দিয়ে ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ লিখে অর্পণ করতে হবে।
– দুধ, গঙ্গাজল ও কালো তিল দিয়ে শিবলিঙ্গকে স্নান করাতে হবে। যে পাত্রে দুধ-গঙ্গাজল নেবেন সেটি তামার না হলেই ভাল। অন্য যে কোনও ধাতুর বা পাথরের পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।
– ভক্তি ভরে শিবের স্তোত্র পাঠ করুন।
– ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ মন্ত্র ১০৮বার জপ করবেন।
– স্বামী বা প্রিয়জনের রোগ আরোগ্য ও সুস্থতার কামনায় মহাদেবের সামনে বসে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করতে পারেন।
– কোনও কাজ আটকে আছে, কিছুতেই ফললাভ হচ্ছে না- এমন সমস্যায় পড়লে শ্রাবণ মাসে প্রতিদিন শিবের কাছে একটি করে আস্ত ফল নিবেদন করুন। ভোলেবাবার কাছে সমস্যার কথা জানান। সমাধান হবে বলেই ভক্তদের প্রচোলিত বিশ্বাস।