মানালী দত্ত, বহরমপুর: প্রতি বছর কালী পূজোর দুদিন আগে ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরাস (Dhanteras) পালিত হয়। এই দিনটি মূলত ধাতু এবং ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রেতাদের মধ্যে একটি অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই ধনতেরাসের দিন ঝাড়ু কেনার দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
বাজারে যখন ধনতেরাসের জন্য কেনাকাটা শুরু হয়, তখন সাধারণত সোনা, রৌপ্য, পিতল, কাঁসা, এবং অন্যান্য ধাতু এবং জিনিসপত্র কেনার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে ক্রেতারা শুধুমাত্র এইসব জিনিসই নয়, বরং ঝাড়ু কেনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ব্যবসায়ীদের মতে, এই নতুন প্রবণতা সমাজের মানসিকতা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যুক্ত। কথিত আছে, ধনতেরাসে নতুন ঝাড়ু কিনলে সকল ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এবং এই বিশ্বাসের কারণে, ব্যবসায়ীরা এখন ঝাড়ুর ওপর বিশেষভাবে নজর দিচ্ছেন। বিভিন্ন ধরণের ঝাড়ু, যেমন বাঁশের ঝাড়ু, প্লাস্টিকের ঝাড়ু, এবং কাঠের ঝাড়ু, বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী জানান, ধনতেরাসের আগে তাদের ঝাড়ু বিক্রির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।
এছাড়াও, ঝাড়ু কিনে নেওয়ার এই নতুন প্রবণতা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বহু মানুষ তাদের ঝাড়ু কেনার ছবি শেয়ার করছেন, এবং একে অপরকে উৎসাহিত করছেন। দোকানগুলিতে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ লাইন, এবং ক্রেতারা নতুন ঝাড়ু কিনতে ব্যাপক উৎসাহ দেখাচ্ছেন।
ধনতেরাসের এই উপলক্ষে বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে ঝাড়ু কেনার প্রবণতা বেড়েছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে নতুন ঝাড়ু কিনলে তাঁদের ঘরে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ আসবে এবং তাঁদের ঋণ থেকে মুক্তি মিলবে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭০% মহিলারা এই দিন নতুন ঝাড়ু কেনার জন্য প্রস্তুত থাকেন।
ঝাড়ু নির্মাতাদের কথায়, এই সময়ের জন্য তাঁরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ধনতেরাসের সময়ে ঝাড়ু তৈরির জন্য তাঁরা বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেন। এবং এই সময় তাঁদের উৎপাদন বাড়িয়ে দেন, যাতে বেশি সংখ্যক ঝাড়ু তৈরি করতে পারেন। এর ফলে, তাঁদের আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ধনতেরাসের দিন ঝাড়ু কেনার প্রবণতা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতীক। এটি মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং মানসিকতার প্রতিফলন ঘটায়। সমাজে ঋণের চাপে মানুষ বিভিন্নভাবে মুক্তি খুঁজছে এবং ঝাড়ু কেনার এই প্রবণতা তারই একটি উদাহরণ।
সুতরাং, ধনতেরাসের দিনে ঝাড়ু কেনার এই নতুন প্রবণতা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে, তবে এটি মানসিক শান্তিরও একটি উৎস হতে পারে। ক্রেতাদের মধ্যে ঋণমুক্তির আশার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ঝাড়ুর চাহিদাও বাড়ছে। এর ফলে, সমাজের একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির উন্মোচন ঘটছে, যা আর্থ-সামাজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।