দক্ষিণ ভারতের রয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের এক গুরত্বপূর্ণ অধ্যায়। পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতমালা,দাক্ষিণাত্য মালভূমি নিয়ে দক্ষিণ ভারত। কাবেরী,কৃষ্ণা,গোদাবরী,তুঙ্গভদ্রা ও ভাইগাই নদী এখানে রচনা করেছে এক অনন্য সুন্দর জগৎ। গড়ে উঠেছে কোচি,কোয়েম্বাটুর,চেন্নাই,বেঙ্গালুরু ও হায়দ্রাবাদ এর মত বড় বড় শহর (Travel Guide)।
কোথাও সবুজ, কোথাও রুক্ষ আবার কোথাও বা মেঘেরা এসে জানান দেয় স্বর্গ বুঝি এখানেই। কোথাও মন্দিরের কারুকার্য মুগ্ধ করে দেশ-বিদেশ থেকে আগত ভ্রমণ পিপাসু দের। সাতবাহন,চোল,চেরা,চালুক্য,পল্লব,রাষ্ট্রকূট,কাকাতিয়া এবং হোয়সলরা একসময় রাজত্ব করেছেন এখানে। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ত তাদের সমৃদ্ধির ইতিহাস।
দক্ষিণ ভারত বিখ্যাত তাদের অভূতপূর্ব কারুকার্য করা মন্দিরগুলির জন্যে এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের জন্যে। অতীতের যুগে নির্মিত অনেক ঐতিহাসিক বিস্ময়ের আবাসস্থল দক্ষিণ ভারত। আপনি যদি ইতিহাস প্রেমী হন তবে ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গা গুলি থেকে (Travel Guide)।
হাম্পি,কর্ণাটক
তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে হাম্পি এই ঐতিহাসিক জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি অতীতে বিজয়নগর সাম্রাজ্য হিসাবে সমৃদ্ধ ছিল,যেখানে প্রাচীন মন্দির,রাজকীয় কমপ্লেক্স এবং ভাস্কর্যগুলি আপনাকে একটি বিগত যুগে নিয়ে যায়। বিরুপাক্ষ মন্দির এবং বিট্টলা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এই ঐতিহাসিক রত্নগুলির মধ্যে অবশ্য দর্শনীয় রত্ন।
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়-এর “তুঙ্গভদ্রার তীরে” র সেই অর্জুনবর্মা ও বিদ্যুন্মালার কাহিনী রচিত হয়েছিল এই জায়গাকে কেন্দ্র করেই। কর্ণাটক রাজ্যের এটি একটি দর্শনীয় স্থান। ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ এখানে আসেন। এটি বর্তমানে UNESCO World Heritage Site এর অন্তর্গত।
বাদামি,পাট্টডাকল এবং আইহোল-চালুক্য সাম্রাজ্যে
বাদামি যা বাতাপি নামেও পরিচিত ছিল। এটি ছিল চালুক্য সাম্রাজ্যের রাজধানী। তাদের সাম্রাজ্য তামিলনাড়ুর কাঞ্চি থেকে নর্মদা নদীর তীরে এবং উড়িষ্যা থেকে পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। নরসিংহ বর্মণের অধীনে পল্লবদের আক্রমণের কারণে সংক্ষিপ্ত বিপত্তির পর, চালুক্যরা তাদের অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে এবং হিন্দু ধর্ম ও শিল্পের পুনরুজ্জীবনকে গুরুত্ব দেয়।
তাদের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মহাকুট,আইহোল,পাট্টডাকল এবং বাদামি মন্দির নির্মাণে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে ৪৮ কিমি দূরত্বের মধ্যে চালুক্যরা বিভিন্ন শৈলীতে ১৫০ টিরও বেশি মন্দির তৈরি করেছিলেন।বাদামি তার রক কাট গুহা মন্দিরের জন্য পরিচিত। বাদামীতে 4টি গুহা মন্দির রয়েছে।
মন্দির গুলিতে তৎকালীন সময়ের নানা হিন্দু পুরাণকাহিনি খদিত রয়েছে যা সত্যই মনে বিস্ময় জাগায়। বাদামিতে রয়েছে একটি লেক যা অগস্ত্য হ্রদ নামে পরিচিত। এটি একটি পবিত্র হ্রদ হিসাবে বিবেচিত হয়। বাদামীতে একটি যাদুঘর রয়েছে, যেটি ১৯৭৬ সালে ASI দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে রয়েছে মাটি খুঁড়ে পাওয়া নানা পুরাকীর্তি ।
মহাবালিপুরম,তামিলনাড়ু
মহাবালিপুরম হল একটি উপকূলীয় শহর যেখানে পাথরে খোদাই করা ইতিহাস রয়েছে যা পাথর কাটা স্মৃতিস্তম্ভগুলির জন্য পরিচিত। সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা শোর মন্দির এবং গঙ্গার জটিলভাবে খোদাই করা অবতরণ পল্লব রাজবংশের বিস্ময়ের প্রমাণ। চীন মন্দির থেকে চমৎতকার স্মৃতিস্তম্ভ,মহাবালিপুরম পর্যটকদের একবারে অন্য অভিজ্ঞতা দেয়। যদিও শহরটি তার গৌরবময় অতীত থেকে অনেক দূরে চলে এসেছে,সেই সময়ের প্রতিচ্ছবি এখনও এই অঞ্চলে রয়ে গেছে,এটি পর্যটক দের মুগ্ধ করে।
তাঞ্জাভুর,তামিলনাড়ু
দ্রাবিড় স্থাপত্যের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় এই অঞ্চল জুড়ে। ভাস্কর্য,শিল্প,রন্ধনপ্রণালী,আতিথেয়তা – সব মিলিয়ে আপনি অবশ্যই হারিয়ে যাবেন এই স্থানে। তাঞ্জাভুর দক্ষিণ ভারতীয় ধর্ম,শিল্প এবং স্থাপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বেশিরভাগ গ্রেট লিভিং চোল মন্দির,যা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মনুমেন্ট ,তাঞ্জাভুর এবং এর আশেপাশে অবস্থিত।
এর মধ্যে সর্বাগ্রে,চোল সম্রাট প্রথম রাজারাজা দ্বারা নির্মিত বৃহদীশ্বর মন্দিরটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এই মন্দিরে একটি একক গ্রানাইট শিলা থেকে খোদাই করা ভারতের বৃহত্তম ষাঁড়ের মূর্তিগুলির একটি (নন্দী)রয়েছে।
মাদুরাই,তামিলনাড়ু
শহরটি ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ টেক্সটাইল হাব এবং বিশ্বমানের তুলা রপ্তানিকারক। শহরের একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্যও রয়েছে যা প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বিখ্যাত মীনাক্ষী মন্দির হিন্দুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান এবং এর স্থাপত্য মূল্যের জন্য বিখ্যাত।
মাদুরাই শহরে আরও বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে,যা বড় শহর থেকে দূরে একটি ছোট ভ্রমণের জন্য জায়গাটিকে উপযুক্ত করে তোলে। মাদুরাই বহু যুগ ধরে পর্যটকদের আকর্ষণের জায়গা। এখান থেকে দেখে নিতে পারেন মীনাক্ষী মাতার মন্দির, ভাইগাই বাঁধ,থিরুমলাই নায়ক মহল, আলগার কয়েল,গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর প্রভৃতি জায়গা (Travel Guide)।