পুজোর মরশুমে সান্দাকফু ট্রেকিং রুটে দুর্ঘটনা রুখতে এবং (Sandakphu) পরিবেশ রক্ষায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত ও নেপালের যৌথ কমিটি ‘নমস্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা ইকো-ট্যুরিজম’। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সম্পূর্ণ ট্রেকিং রুটকে ‘ওয়েস্ট ফ্রি রুট’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।(Sandakphu) এই উদ্যোগে শামিল হয়েছে দুই দেশের ট্যুর অপারেটর, হোটেল মালিক, হোমস্টে অ্যাসোসিয়েশন, জিটিএ, রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন।
ট্রেকারদের জন্য কড়া বিধিনিষেধ ও মেডিক্যাল সহায়তা
ট্রেকাররা এবার থেকে সান্দাকফুতে কোনো ধরনের প্লাস্টিক(Sandakphu) বা বর্জ্য ফেলে আসতে পারবেন না। ট্রেক শুরুর আগে এবং শেষে পর্যটকদের বহন করা সামগ্রী মিলিয়ে দেখা হবে। এর জন্য থাকবেন পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং নির্দিষ্ট চেকপয়েন্ট। সান্দাকফুতে অতীতে পর্বতারোহীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবারে দুর্গম এলাকাগুলিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার, মাস্ক ও জরুরি ওষুধ রাখা হবে(Sandakphu)
‘নমস্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা ইকো-ট্যুরিজম’-এর চেয়ারপার্সন কেশরী গুরুং জানান, গত ১০-১১ জুন দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ‘ক্রস বর্ডার ইকো-ট্যুরিজম’ উৎসবে ভালো সাড়া মেলায় অনেক সংস্থা পরিবেশবান্ধব পর্যটনে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তাই এবারে পুজোর সময়ে আরও বেশি সচেতনতা ও কড়াকড়ির মাধ্যমে ট্রেক রুটকে সম্পূর্ণ বর্জ্যহীন হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পর্যটকদের জন্য নির্দেশিকা, গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ
বর্তমানে শুধু ট্রেকার নয়, সাধারণ পর্যটকরাও গাড়ি করে সান্দাকফুতে যাচ্ছেন।(Sandakphu) তাদের মধ্যে অনেকেই প্লাস্টিক বোতল, চিপস বা বিস্কুটের প্যাকেট ফেলে আসছেন। এই প্রবণতা রুখতেই এবার গাড়ি চালকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরা পর্যটকদের বোঝাতে পারেন পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব। গাড়িতে ওঠার আগেই পর্যটকদের সতর্ক করা হবে যে, কোনও বর্জ্য সান্দাকফুতে ফেলা যাবে না, এবং তা নিজের সঙ্গেই ফিরিয়ে আনতে হবে।
রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটির চেয়ারম্যান রাজ বসু জানান, প্রায় দু’শো বছর ধরে এই রুট দিয়ে ট্রেকিং ও পর্বতারোহণ চলছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অতিরিক্ত পর্যটনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। সান্দাকফু ও তার আশেপাশে বর্তমানে ১৩০টিরও বেশি হোটেল ও বহু হোমস্টে গড়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এগুলোর বর্জ্য নিষ্পত্তির কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই। এবার সেইসব হোটেল ও হোমস্টেগুলোকেও নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করা হবে(Sandakphu)
পর্যটনের সঙ্গে দায়িত্বও জরুরি
সান্দাকফু শুধু একটি ট্রেক রুট নয়, এটি এক স্বর্গীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। এখান থেকে পৃথিবীর পাঁচটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ—এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে, মাকালু ও চো ওয়ু দেখা যায়। রডোডেনড্রনের সৌরভে ঘেরা এই অঞ্চল অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের কাছে এক স্বপ্নের গন্তব্য। কিন্তু সেই স্বপ্নকে টিকিয়ে রাখতে হলে পর্যটকদেরও দায়িত্ববান হতে হবে।
পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের একার উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, সচেতনতা চাই সাধারণ পর্যটকদের মধ্যেও। শুধু সৌন্দর্য উপভোগ নয়, সেই সৌন্দর্যকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বও আমাদেরই। ভারত-নেপাল যৌথ কমিটির এই উদ্যোগ যদি সফল হয়, তবে ভবিষ্যতের জন্য সান্দাকফু হতে পারে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের এক আদর্শ মডেল।