বাজেটে পর্যটন খাতে বড় পদক্ষেপ, নতুন দিগন্ত উন্মোচন ভারতের পর্যটন শিল্পে

আসমুদ্রহিমাচল আমাদের এই ভারতবর্ষ। প্রকৃতি ঢেলে সাজিয়েছে ভারতকে। ভারতের পর্যটন ক্ষেত্র হল একটি ক্রমবর্ধমান শিল্প। তাই ২০২৫ সালের বাজেট প্রস্তাবনায় পর্যটন খাতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা…

আসমুদ্রহিমাচল আমাদের এই ভারতবর্ষ। প্রকৃতি ঢেলে সাজিয়েছে ভারতকে। ভারতের পর্যটন ক্ষেত্র হল একটি ক্রমবর্ধমান শিল্প। তাই ২০২৫ সালের বাজেট প্রস্তাবনায় পর্যটন খাতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নতি এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে। দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন এবং সংযোগ বৃদ্ধির জন্য একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

একাধিক পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন

   

বাজেটে জানানো হয়েছে যে, দেশের ৫০টি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, এই কেন্দ্রগুলি দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও শক্তিশালী করবে। রাজ্যগুলির সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় সরকার এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাবে। পর্যটন কেন্দ্রগুলির আকর্ষণ বৃদ্ধির জন্য সেখানে নতুন হোটেল তৈরি করা হবে, যা বিদেশি এবং দেশীয় পর্যটকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করবে।

এছাড়াও,নির্দিষ্ট পর্যটক গোষ্ঠীর জন্য ভিসা ফি মুকুবের ঘোষণা করা হয়েছে। যা পর্যটকদের জন্য আরও সুবিধাজনক করবে। ই-ভিসা পরিষেবার সহজীকরণের মাধ্যমে বিদেশি পর্যটকদের ভারতে আসা আরও সুবিধাজনক হবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেটে এই সমস্ত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছেন, যা পর্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

হোমস্টে ব্যবসার জন্য মুদ্রালোন

পর্যটন শিল্পের প্রসারে হোটেল ব্যবসার পাশাপাশি, হোমস্টে ব্যবসাকে শক্তিশালী করার জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। হোমস্টে একটি ছোট ব্যবসা হলেও এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ছোট ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে, যাতে তারা তাদের ব্যবসা আরও উন্নত করতে পারেন।

এছাড়াও, এটি স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির অর্থনীতিতে বিশেষ উন্নতি আনবে। হোমস্টে গড়ে ওঠার ফলে, পর্যটকরা কম খরচে থাকার সুযোগ পাবেন, যা তাদের বেড়ানোর অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দময় করবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর বিকাশ ঘটবে। স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত হবে।

বৌদ্ধিক পর্যটন কেন্দ্রগুলির উপর গুরুত্ব আরোপ

ভারতের যে সমস্ত জায়গা গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেখানে পর্যটন বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৌদ্ধিক পর্যটন কেন্দ্রগুলির উন্নয়ন এবং তাদের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য সরকার একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এর ফলে, দেশীয় ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য এই স্থানগুলি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

এটি ভারতের পর্যটন খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরবে। বৌদ্ধিক পর্যটন কেন্দ্রগুলির উন্নয়ন বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভারতের ইতিহাস ও ধর্মীয় গুরুত্বকে আরও ভালভাবে পরিচিত করার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

চিকিৎসা পর্যটন এবং হিল ইন ইন্ডিয়া

স্বাস্থ্য খাতে একটি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে বাজেট প্রস্তাবনা। ভারতের চিকিৎসা সেবা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ভারতকে একটি আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল ট্যুরিজম গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যারা চিকিৎসার জন্য ভারতে আসতে চান, তাদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত করার কথা বাজেটে বলা হয়েছে।

এছাড়া, ‘হিল ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় ভারতের হিল স্টেশনগুলির উন্নয়ন করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে, ভারতকে একটি স্বাস্থ্যকর পর্যটন গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হবে, যেখানে পর্যটকরা শুধুমাত্র রূপবৈচিত্র্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন না, বরং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যও উন্নত করতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি যোজনা

পর্যটনের পরিকাঠামো বৃদ্ধির জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি যোজনা’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবহণ পরিকাঠামো এবং পর্যটকদের জন্য যাতায়াতের সুবিধা আরও উন্নত করা হবে। এটি ভারতের পর্যটন সেক্টরের একটি বড় শক্তি হয়ে উঠবে, যার ফলে দেশে পর্যটকদের আসা আরও সহজ হবে এবং দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন হবে।

পর্যটন খাতের প্রবৃদ্ধি

‘ওয়ার্ল্ড ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল’-এর মতে, ভারতের পর্যটন সেক্টরে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন মানুষ কাজ করেন, যা ভারতের মোট জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতের জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ছিল ৫ শতাংশ। এর মধ্যে ২.৬ শতাংশ সরাসরি এবং ২.৪ শতাংশ পরোক্ষভাবে পর্যটনের মাধ্যমে এসেছে।

এই সব পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারত তার পর্যটন শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তার প্রতিযোগিতা বাড়াতে সক্ষম হবে। ভারতে পর্যটনের উন্নতি শুধু দেশীয় অর্থনীতিতেই অবদান রাখবে না, বরং বিশ্বের অন্যতম প্রধান পর্যটন গন্তব্য হিসেবেও ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।