কলকাতা ৪ অক্টোবর: একটি সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাপী গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে (India Life Style)। তথ্য অনুসারে ভারতে দীর্ঘমেয়াদে প্রতি বছর প্রায় ৫১ লাখ মানুষ চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারে। মশাবাহিত এই রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়, ভারতের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, শহরায়ন, এবং অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কারণে এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এই তথ্য ভারত সরকার এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গবেষণাটি, যা ‘জার্নাল অফ গ্লোবাল হেলথ’-এ প্রকাশিত হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে। এটি জানায়, ভারতের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু, বিশেষ করে দক্ষিণ, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল, চিকুনগুনিয়ার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করছে।
হিমাচলে বর্ষার ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতি ₹৫,৫০০ কোটি, এখনও বন্ধ বহু রাস্তা ও জল প্রকল্প
এডিস মশা, যা ডেঙ্গু এবং জিকার বাহক, শহরাঞ্চলে জল জমে থাকা এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে দ্রুত বংশবিস্তার করছে। গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের শহরাঞ্চলের প্রায় ৪০% জনগণ এই রোগের ঝুঁকিতে থাকবে। চিকুনগুনিয়া জ্বর, তীব্র পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা, এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি সৃষ্টি করে, যা রোগীদের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেয়।
ভারতে ২০০৬ সালে চিকুনগুনিয়ার মহামারীতে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। গত দশকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে, বিশেষ করে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বই, এবং কলকাতার মতো শহরে। ২০২৪ সালে কেবল দিল্লিতেই ৩,০০০-এর বেশি কেস রিপোর্ট হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারতের জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং অপর্যাপ্ত মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এই রোগের বিস্তারকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
গবেষণায় আরও জানানো হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষার সময়কাল বেড়ে যাওয়া এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি মশার প্রজননকে উৎসাহিত করছে। শহরাঞ্চলে জল জমে থাকা, নির্মাণস্থলের অপরিচ্ছন্নতা, এবং প্লাস্টিক বর্জ্য এডিস মশার জন্য প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করছে। গবেষকরা বলছেন, ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই বিপুল সংখ্যক রোগীকে সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। চিকুনগুনিয়ার কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা টিকা না থাকায় প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।
ভারত সরকারের জাতীয় ভেক্টর বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনভিবিডিসিপি) মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে, কিন্তু গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি পর্যাপ্ত নয়। এসএফআই-এর মতো সংগঠন এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। তারা বলছে, “সরকারকে মশা নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্নতা, এবং জনস্বাস্থ্য শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।” তারা দাবি করেছে, প্রতি জেলায় চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার জন্য ল্যাব এবং বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।