কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথি মানেই মাতৃ আরাধনার মহোৎসব — কালীপুজো (Kali Puja 2025) । অন্ধকার রাতের বুক চিরে আলো হয়ে ধরা দেন দেবী কালিকা। সেই ভয়ংকরী, উগ্র, দয়াময়ী মাতৃরূপেই দেবী পুজিত হন ঘরে ঘরে, মন্দিরে মন্দিরে। কলকাতার বিখ্যাত ফাটাকেষ্টর কালীপুজো, দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট কিংবা তারাপীঠের সাধনভূমি— সর্বত্রই এই রাতে বাজে ঢাক, শঙ্খ, উলুধ্বনির আওয়াজ। ভক্তরা লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখেন, পুজো দেন, আর মনেপ্রাণে কামনা করেন— “মা, তুমি আমাদের কষ্ট দূর করো, ঘরভর্তি করো সুখ-সমৃদ্ধিতে।”
এই মহারাত্রিতে দেবীকে সন্তুষ্ট করতে শুধু মন থেকে আরাধনাই নয়, প্রয়োজন সঠিক উপায়ে নিবেদন— অর্থাৎ মায়ের পছন্দের ভোগ, ফুল, ধূপ-দীপ ইত্যাদি। লোকবিশ্বাস, কালীমায়ের ভোগ যদি নিয়ম মেনে, নিষ্ঠা সহকারে নিবেদন করা যায়, তাহলে জীবনে ঘুচে যায় দুর্ভাগ্য, আসে সুদিন। জেনে নেওয়া যাক কী কী নিবেদন করলে প্রসন্ন হন মা কালিকা।
লোককথা বলে, দেবী কালিকা নাকি গুড় খেতে খুব ভালবাসেন। বিশেষ করে তালের গুড় হলে তো কথাই নেই। তবে এখন বাজারে যে রকমের গুড় পাওয়া যায়, তাও চলবে— শুধু পরিমাণে যেন কার্পণ্য না হয়। পুজোর সময় একটি ছোট পাত্রে ভরে মা-র চরণে নিবেদন করুন গুড়। এই গুড় পরে প্রসাদ হিসেবে নিজে খান, ও পরিবারের অন্যদের মধ্যে ভাগ করে দিন। বিশ্বাস, এই গুড় খেলে রোগ-শোক দূরে থাকে, আর জীবনে আসে মিষ্টতা।
কালীপুজোর অন্যতম প্রধান প্রসাদ হল খিচুড়ি। তবে যে সে খিচুড়ি নয়— দেবীর পছন্দ হল মুগ ডালের সুস্বাদু খিচুড়ি। সোনালি রঙের, ঘিয়ে ভাজা সুগন্ধে ভরা খিচুড়ি যেন মাতৃভোগের প্রাণ। অনেক জায়গায় পিতল বা কাঁসার পাত্রে খিচুড়ি নিবেদন করা হয়, সঙ্গে থাকে নানা সবজির তরকারি। মায়ের কৃপা পেতে খিচুড়ি যেন বাদ না পড়ে ভোগে।
খিচুড়ির সঙ্গে দেবীকে নিবেদন করা হয় নানা ধরনের সবজি ও তরকারি। বিশেষ করে লাবড়া (বিভিন্ন সবজির মিশ্র পদ), কষা আলুর দম ইত্যাদি অত্যন্ত প্রিয় মাতৃভোগ। কোনো কোনো স্থানে মায়ের কাছে বলি দেওয়া হয়— সেই মাংস সিদ্ধ করে বা কষিয়ে নিবেদন করা হয় ভোগে। তবে মনে রাখতে হবে, ভোগে রান্না হলে তাতে পেঁয়াজ-রসুন ব্যবহার করা একেবারেই নিষিদ্ধ। ভক্তি ও শুদ্ধতায় তৈরি এই ভোগেই মিলতে পারে দেবীর আশীর্বাদ।
দেবী কালিকার পুজোয় ফুলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল জবা ফুল। এর লাল রঙ দেবীর তেজ, শক্তি ও রক্তবর্ণ প্রতীক। এছাড়াও রক্তচন্দন, শিউলি ফুলও নিবেদন করা হয়। ধূপ-ধুনো, ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে পুজোর পরিবেশ তৈরি করে তুলুন পবিত্র।
এই দিন অনেকে উপবাস পালন করেন। কালীপুজোর আগের রাত থেকে অনশন রেখে পরদিন সকালে ফলাহারে দিন কাটান। অনেকেই রাত জেগে কালীমন্ত্র জপ করেন, তন্ত্রসাধনার মধ্যেও এই রাত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।