রাশিয়ার তৈরী প্রথম ক্যান্সার ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বিনামূল্যে!

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি যুগান্তকারী উন্নয়ন হিসেবে, রাশিয়া (Russia)২০২৫ সালের শেষের দিকে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্মিত ক্যান্সার ভ্যাকসিনের মানব পরীক্ষা শুরু করতে চলেছে। এই…

Russia cancer vaccine for public

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি যুগান্তকারী উন্নয়ন হিসেবে, রাশিয়া (Russia)২০২৫ সালের শেষের দিকে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্মিত ক্যান্সার ভ্যাকসিনের মানব পরীক্ষা শুরু করতে চলেছে। এই ভ্যাকসিন, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, ক্যান্সার চিকিৎসায় একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল এটি জনগণের জন্য বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। এই উদ্যোগ রাশিয়ার গামালেয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ফর এপিডেমিওলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যারা পূর্বে স্পুটনিক ভি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল। এই ভ্যাকসিন ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবায় একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করতে পারে।

   

এই এমআরএনএ (মেসেঞ্জার আরএনএ) ভিত্তিক ভ্যাকসিনটি মেলানোমা, ত্বকের একটি মারাত্মক ক্যান্সার, লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি প্রতিরোধমূলক ভ্যাকসিন নয়, বরং একটি থেরাপিউটিক চিকিৎসা, যা বিদ্যমান ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হবে। ভ্যাকসিনটির বিশেষত্ব হল এটি ব্যক্তিগতকৃত, অর্থাৎ প্রতিটি রোগীর টিউমারের জেনেটিক প্রোফাইলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।

টিউমারের জেনেটিক তথ্য বিশ্লেষণ করে এআই অ্যালগরিদম নিওঅ্যান্টিজেন নামক টিউমার-নির্দিষ্ট প্রোটিন শনাক্ত করে, যা শুধুমাত্র ক্যান্সার কোষে থাকে। এই নিওঅ্যান্টিজেনগুলো এমআরএনএ-তে এনকোড করা হয় এবং রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্যান্সার কোষ চিনতে এবং ধ্বংস করতে শেখায়।

এই প্রক্রিয়াটি ঐতিহ্যগত কেমোথেরাপির তুলনায় কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং সুনির্দিষ্টভাবে ক্যান্সার কোষকে লক্ষ্য করে।গামালেয়া সেন্টারের পরিচালক আলেকজান্ডার গিন্টসবার্গ জানিয়েছেন, এই ভ্যাকসিন তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া—টিউমারের জিনোম সিকোয়েন্সিং থেকে ভ্যাকসিন উৎপাদন পর্যন্ত—মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব।

এআই-চালিত নিউরাল নেটওয়ার্ক এই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে, কখনও কখনও মাত্র ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাকসিন ডিজাইন সম্পন্ন হয়। এই দ্রুততা এবং নির্ভুলতা ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে মস্কোর এন.এন. ব্লোখিন ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার এবং হার্টসেন মস্কো অনকোলজি ইনস্টিটিউটে এই ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের মানব পরীক্ষা শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে এটি মেলানোমা রোগীদের উপর পরীক্ষা করা হবে, তবে ভবিষ্যতে প্যানক্রিয়াটিক, নন-স্মল সেল ফুসফুস এবং কিডনি ক্যান্সারের জন্যও এটি প্রয়োগ করা হবে।

Advertisements

রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ভ্যাকসিনের উৎপাদন খরচ, যা প্রতি ডোজ প্রায় ৩০০,০০০ রুবল (প্রায় ২,৮৬৯ মার্কিন ডলার), সম্পূর্ণভাবে সরকারি তহবিল থেকে বহন করবে। এই উদ্যোগটি রাশিয়ার প্রায় ৪০ লাখ ক্যান্সার রোগী এবং প্রতি বছর নতুন করে নির্ণয় হওয়া ৬২৫,০০০ ক্যান্সার রোগীর জন্য একটি বড় স্বস্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রাক-ক্লিনিকাল পরীক্ষায় এই ভ্যাকসিন ইঁদুরের উপর পরীক্ষায় ৮৫% ক্ষেত্রে টিউমারের অগ্রগতি বন্ধ করেছে এবং ৬০% ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুস্থতা অর্জন করেছে। এই ফলাফল বিশ্বব্যাপী অন্যান্য এমআরএনএ ভ্যাকসিন গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেমন মডার্না এবং বায়োএনটেকের কাজ। তবে, রাশিয়ার বিনামূল্যে প্রদানের প্রতিশ্রুতি এটিকে অনন্য করে তুলেছে।

এই উদ্যোগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১৩২,০০০ নতুন মেলানোমা কেস নির্ণয় হয়, এবং এই ভ্যাকসিন সফল হলে এটি ক্যান্সার চিকিৎসায় একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে।

তরুণদের জন্য সুখবর, বিএসএফ-এ ৪৭০৭টি শূন্যপদ ঘোষণা

কিছু পশ্চিমা বিজ্ঞানী এই ভ্যাকসিন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন, কারণ এর ক্লিনিকাল ডেটা এখনও পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের ইমিউনোলজিস্ট প্রফেসর কিংস্টন মিলস বলেন, “ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ডেটা না দেখা পর্যন্ত এটি নিয়ে সংশয় থাকবে।” তবে, গামালেয়া সেন্টার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা তাদের ডেটা উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করবে।