ভারতের শহরগুলিতে যানজট এখন একটি অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কলকাতা ও মুম্বইয়ের মতো বড় শহর বা জেলা সদরগুলিতে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটও তীব্র হচ্ছে, যা অ্যাম্বুল্যান্সের গতির পথেও বাধা সৃষ্টি করছে। যদিও পুলিশ গ্রিন করিডোর তৈরি করে রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে, কিন্তু সেই পরিষেবা সবার ভাগ্যের চাকায় গোড়ায় না। সেক্ষেত্রে শহরের রাস্তায় প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত যানজটের সমস্যায় ভুক্তভুগী রুগী থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীরাও। তবে, এই সমস্যার সমাধান হিসেবে ভারত এবার চালু করতে যাচ্ছে ‘অন-রোড ভার্টিক্যাল টেক-অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং’ (eVTOL) এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা।
এই নতুন সেবা রোগী পরিবহণের জন্য আকাশপথে ব্যবহার করা হবে, যা যানজটে আটকে থাকা রাস্তায় নয়, সরাসরি আকাশপথে উড়ে যাবে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সগুলির টেক-অফ বা ল্যান্ডিংয়ের জন্য কোনও রানওয়ের প্রয়োজন হবে না, যা সেবাটিকে আরও কার্যকরী করে তোলে। এই অ্যাম্বুল্যান্সগুলি হবে বিদ্যুৎচালিত, ফলে পরিবেশের উপর কোনো বিরূপ প্রভাবও পড়বে না।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স সংস্থা ICATT সম্প্রতি ePlane Company-র সঙ্গে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, ICATT-কে ইপ্লেন কোম্পানি ৭৮৮টি ইভিটিওএল এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স সরবরাহ করবে। পরবর্তীতে, ভারতের প্রতিটি জেলায় এই পরিষেবা চালু হবে।
ePlane কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক সত্য চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ এই পরিষেবা চালু করার লক্ষ্য রয়েছে। তাঁর সংস্থা প্রতি বছর ১০০টি করে ইভিটিওএল উৎপাদন করতে সক্ষম। ভারতের ভৌগোলিক বৈচিত্র্য অনুযায়ী, কোম্পানি তিনটি আলাদা ধরনের এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স তৈরি করছে— একটি পাহাড়ি এলাকায়, একটি সমুদ্রতটবর্তী অঞ্চলে, এবং আরেকটি জঙ্গলের জন্য উপযোগী।
প্রতিটি eVTOL এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে একজন পাইলট, একজন প্যারামেডিক, একজন রোগী এবং একটি স্ট্রেচার থাকবে। এছাড়া থাকবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। এই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সগুলির সর্বোচ্চ গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার এবং একবার চার্জে ১১০ কিলোমিটার থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারবে।
এই নতুন সেবা চালু হলে ভারতের শহরগুলির যানজটের সমস্যা অনেকটা কমবে এবং অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে দ্রুত রোগী পরিবহণ করা সম্ভব হবে, যা বিশেষ করে জরুরি চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী হবে।