বিশ্বের প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষ এখনো নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন জলের (Water Stressed World) সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই ভয়াবহ সংকটে নতুন দিশা দেখাচ্ছে সুইডেন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ECOLOO। তারা তৈরি করেছে একটি অভিনব ও পেটেন্টকৃত ওয়াটারলেস টয়লেট (Sustainable Sanitation) প্রযুক্তি। জল ছাড়াই কাজ করে এমন এই বায়ো-টয়লেট ব্যবস্থাটি শুধু যে পরিবেশবান্ধব, তাই নয়। স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাও দূর করে এবং মানব বর্জ্যকে রূপান্তর করে করে তোলে জৈব সারের।
ECOLOO সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইমাদ আগি বলেন, “আমাদের প্রযুক্তি প্রচলিত শৌচাগারের তুলনায় প্রায় ৯৫% পর্যন্ত জলসাশ্রয় করে। বাকি ৫% জল ব্যবহৃত হয় কেবলমাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে।” বর্তমানে এই প্রযুক্তিভিত্তিক বায়ো-টয়লেট ব্যবস্থাটি বিশ্বের ২৫টিরও বেশি দেশে ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, চিলি এবং বিভিন্ন আফ্রিকান দেশ।
এই টয়লেটগুলো এক প্রাকৃতিক অ্যারোবিক ব্যাকটেরিয়া কালচারের মাধ্যমে মানব বর্জ্যকে নির্গত গন্ধ ও রোগজীবাণু মুক্ত করে একে পরিণত করে তরল জৈব সারে। এই সার সম্পূর্ণ নিরাপদ, জৈব এবং দুর্গন্ধমুক্ত হওয়ায় তা কৃষিকাজ, ল্যান্ডস্কেপিং এবং কমিউনিটি গার্ডেনেও ব্যবহার করা সম্ভব।
ভারতের ‘স্বচ্ছ ভারত মিশনে’র সাথে স্বাচ্ছন্দ্য রেখে, ECOLOO এবং তাদের অংশীদার BOOTES, যৌথভাবে চালু করেছে SAFE (Sustainable, Affordable, Flexible, Ecological) Toilets— এমন একটি মডেল যা পানি ও বিদ্যুৎ ছাড়াই কাজ করে এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় খুবই কম।
ইমাদ আগি আরও বলেন, “এই প্রযুক্তি কেবল স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন নিশ্চিত করে না, বরং এর মাধ্যমে উৎপাদিত জৈব সার ব্যবহার করে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হয় এবং স্থানীয় জনগণের জন্য নতুন আয়ের সুযোগ তৈরি হয়।”
বিশ্বজুড়ে এখনও প্রতিদিন প্রায় ১০,০০০ মানুষ মারা যায় টয়লেট থেকে দূষিত জলের মাধ্যমে ছড়ানো বিভিন্ন রোগে। এই মৃত্যু ঠেকাতে এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনের জন্য ECOLOO কাজ করছে বিভিন্ন সরকার, NGO ও কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব (CSR) সংস্থার সাথে মিলিতভাবে। জল সংরক্ষণ, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন এবং কৃষি উৎপাদনের তিনটি খাতেই ECOLOO-র “Recover, Reuse, Recycle” পদ্ধতি আগামী দিনে টেকসই অবকাঠামো গঠনে একটি বাস্তব ও কার্যকর সমাধান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।