দীপাবলির আলো-আনন্দ শেষ হতেই হিন্দু পরিবারগুলো আবারো উৎসবের আবহে ডুবে যাবে। কারণ দীপাবলির পরেই পালিত হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাই দুজ। এটি কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে উদযাপিত হয়, আর ২০২৫ সালে এই শুভ দিন পড়ছে ২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার। ভ্রাতৃদ্বিতীয়া শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি ভাই-বোনের অটুট ভালোবাসা ও পারিবারিক সম্পর্কের মহিমা উদযাপনের দিন।
উৎসবের আবেগ ও তাৎপর্য
ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার মূল ভাবনা হলো—ভাই-বোনের সম্পর্ক। এই দিনে বোনেরা ভাইদের কপালে তিলক পরিয়ে তাঁদের দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করে। ভাইয়েরা বোনকে উপহার দিয়ে সুরক্ষা ও ভালোবাসার অঙ্গীকার করে। ছোট ছোট গ্রামে যেমন, তেমনি শহরেও এই দিনটি পরিবারের জন্য এক আবেগঘন মুহূর্ত নিয়ে আসে।
যম দ্বিতীয়ার কাহিনি
এই উৎসবের সঙ্গে একটি পুরাণকথা জড়িয়ে আছে। বলা হয়, মৃত্যুর দেবতা যমরাজ তাঁর বোন যমুনার বাড়িতে এই দিন গিয়েছিলেন। যমুনা ভাইকে সাদরে বরণ করে তিলক পরান এবং আহার করান। বোনের স্নেহে আপ্লুত যমরাজ আশীর্বাদ দেন—যে ভাই এই দিনে বোনের কাছ থেকে তিলক নেবে, তার অকাল মৃত্যু হবে না। তাই এই দিনকে ‘যম দ্বিতীয়া’ নামেও ডাকা হয়। এই গল্প আজও প্রতিটি ভাই-বোনের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেয়।
শুভ সময় ও বিশেষ যোগ
দ্রিক পঞ্চাং অনুসারে, কার্তিক শুক্ল দ্বিতীয়া তিথি শুরু হচ্ছে ২২ অক্টোবর রাত ৮টা ১৬ মিনিটে এবং শেষ হবে ২৩ অক্টোবর রাত ১০টা ৪৬ মিনিটে। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের ভিত্তিতে উৎসব পালিত হবে ২৩ অক্টোবর।
এবার ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় একাধিক শুভ যোগ তৈরি হচ্ছে—
- আয়ুষ্মান যোগ: ২৩ অক্টোবর সকাল থেকে ২৪ অক্টোবর ভোর ৫টা পর্যন্ত।
- সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ: ২৪ অক্টোবর ভোর ৪:৫১ থেকে ৬:২৮ পর্যন্ত।
- রবিযোগ: একই সময়ে কার্যকর।
বিশাখা নক্ষত্র থাকবে ২৪ অক্টোবর ভোর ৪:৫১ পর্যন্ত, এরপর শুরু হবে অনুরাধা নক্ষত্র।
তিলকের শুভ সময় (Tilak Muhurat)
এই বছরের ভাই দুজে তিলক করার সবচেয়ে শুভ মুহূর্ত নির্ধারিত হয়েছে দুপুর ১টা ১৩ মিনিট থেকে ৩টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত। মাত্র দুই ঘণ্টার এই সময়েই সবচেয়ে বেশি শুভ ফল পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস।
তবে দিনের আরও কিছু শুভ সময় রয়েছে—
- ব্রহ্ম মুহূর্ত: ভোর ৪:৪৫ থেকে ৫:৩৬
- অভিজিৎ মুহূর্ত: দুপুর ১১:৪৩ থেকে ১২:২৮
- অমৃতকাল: সন্ধ্যা ৬:৫৭ থেকে রাত ৮:৪৫
পারিবারিক বন্ধনের উৎসব
ভাই দুজ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পরিবারই জীবনের আসল শক্তি। এই উৎসব শুধু তিলক বা উপহারের নয়, এটি ভাই-বোনের আন্তরিক ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের প্রতীক। জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও এই দিন মানুষকে একত্রিত করে, সম্পর্ককে করে আরও গভীর।
২০২৫ সালের ভ্রাতৃদ্বিতীয়া তাই শুধু ক্যালেন্ডারের একটি তারিখ নয়, বরং এটি একটি আবেগময় উপলক্ষ। দুপুরের ওই বিশেষ মুহূর্তে বোনেরা ভাইকে তিলক দিয়ে প্রার্থনা করবেন, আর ভাইয়েরাও প্রতিশ্রুতি দেবেন বোনের পাশে সারাজীবন থাকার। এই দিনটি ভাই-বোনের অমলিন সম্পর্কের সৌন্দর্যকে বারবার মনে করিয়ে দেয়।