বসন্ত (Travel During Spring) মানেই নতুনের আগমন। পুরাতন বিষণ্ণতাকে কাটিয়ে জীবনে নতুনভাবে বাঁচার আশা জাগায় বসন্ত। শীত গুটি গুটি পায়ে বিদায় নিয়েছে অনেকদিন। রাতের দিকে হিম ভাব থাকলেও, দিনের উত্তাপ জানান দিচ্ছে গ্রীষ্মের আগমনবার্তা। নতুন রূপে সেজে উঠছে প্রকৃতি। এই সময় সবার মন চায় কাছে পিঠে দুদিনের ছুটি কাটিয়ে আসতে।
অফিসের পর ক্লান্ত শরীর কিংবা অনেকদিন বদ্ধ ঘরে হাঁপিয়ে ওঠা মন, চায় সতেজ নিশ্বাস নিতে। পলাশের আগুন রঙে রাঙ্গা প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে, ঠিক এঈ সময় ঘুরে আসতে পারেন ঘরের কাছের পাহাড়, জঙ্গল থেকে। বাঁকুড়া জেলায় বসন্তের সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। প্রকৃতির রূপের মাঝে একদম অন্য রকম অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। চলুন, জেনে নিই সেই সব জায়গার কথা, যেখানে বসন্তে পলাশের রঙে মাখানো প্রকৃতি আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করবে।
সুতানের জঙ্গল
বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থেকে ঝিলিমিলি যাওয়ার পথে সুতানের জঙ্গলটি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ও পলাশের রাঙা ফুলের জন্য বিখ্যাত। এখানে শাল, সেগুনের গাছ ছড়িয়ে রয়েছে, যা বর্ষায় সবুজ হয়ে ওঠে। বসন্তে পলাশের লাল, হলুদ রঙে পূর্ণ হয়ে উঠে পুরো এলাকা। সুতান গ্রাম, ঝাড়গ্রাম ও বেলপাহাড়ির জঙ্গলগুলো পলাশের রঙে রাঙা হয়ে ওঠে। যা দেখতে প্রতিবছর পর্যটকরা এখানে ভিড় জমান। এটি হাইকিং, ট্রেকিং এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য অদ্বিতীয় স্থান। এই অঞ্চলে প্রতিবছর বসন্তে পর্যটকদের আগমন বেড়ে যায় কারণ এখানে পলাশের সৌন্দর্য উপভোগ করা সত্যিই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকে জঙ্গল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়, যা আপনাকে আরও বেশি আনন্দ দেবে।
বৃন্দাবনপুর
বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের বৃন্দাবনপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভান্ডার। যা বছরের পর বছর পর্যটকদের আকর্ষণ করে চলেছে। এখানে শাল ও সেগুনের গাছ রচনা করেছে অন্য পৃথিবী। বসন্তে এখানে পলাশ ফুল ফুটে ওঠে, যা জঙ্গলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। সোনামুখি-পাথরা নজরমিনার দর্শনেও আপনি যেতে পারেন, যা এই এলাকাটির এক ঐতিহাসিক অংশ। বৃন্দাবনপুরের কাছেই বিষ্ণুপুর দুর্গ এবং বিহারীনাথ মন্দিরও রয়েছে, যা ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে। সেখান থেকে দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপভোগ করে আপনি প্রকৃতির মেলবন্ধনে হারিয়ে যেতে পারবেন।
বিহারীনাথ পাহাড়
বাঁকুড়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড় বিহারীনাথ, যা ১৪৫০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে শিব মন্দির রয়েছে এবং প্রতি বছর পুণ্যার্থী ও ভ্রমণকারীরা এখানে শিবের পুজো দিতে আসেন। পাহাড়ে ওঠার পথ কিছুটা কষ্টকর হলেও এখানে আসলে আপনি পলাশের রঙে মোড়া প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পাবেন। বসন্তে এখানে প্রচুর পলাশ ফুল ফোটে, যা পুরো এলাকায় আগুনের মতো রঙ ছড়ায়। শালতেড়া গ্রাম থেকে বিহারীনাথ যেতে হয় এবং এখানকার পাহাড়ি সৌন্দর্য প্রকৃতির প্রেমীদের জন্য এক অতুলনীয় অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।
শুশুনিয়া পাহাড়
শুশুনিয়া পাহাড় বাঁকুড়ার দ্বিতীয় উচ্চতম পাহাড়। এটি শুধুমাত্র পাহাড়ি সৌন্দর্যেই নয়, জীববৈচিত্র্য এবং ঐতিহাসিক দিক দিয়েও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুশুনিয়া পাহাড়ের উত্তর ঢালে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের পাথরের গায়ে খোদিত লিপিমালা রয়েছে, যা এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে। বসন্তে শুশুনিয়া পাহাড়ের গাছগুলো পলাশের ফুলে ভরে ওঠে, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্য একটি মাত্রা যোগ করে। এখানে হাইকিং এবং ট্রেকিং করা বেশ জনপ্রিয়।
বেলিয়াতোড় জঙ্গল
কলকাতা থেকে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত বেলিয়াতোড় জঙ্গল অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জায়গা। বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে এই জঙ্গলটি অবস্থিত। এখানে রাত্রিযাপন করার জন্য অতিথি নিবাস রয়েছে। যেখানে থেকে বসন্তে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানো যায়। জঙ্গলের মধ্যে হেঁটে গেলে আপনি দেখতে পাবেন পলাশ ফুলের এক চমৎকার দৃশ্য। এই এলাকা এখনও অতিরিক্ত পর্যটকের আগমন থেকে মুক্ত, ফলে এটি এক শান্ত এবং নির্জন পরিবেশ উপভোগের জন্য আদর্শ স্থান। বেলিয়াতোড়ে প্রবাহিত নদী, ঘন জঙ্গল, এবং পলাশের সৌন্দর্য দেখতে আসলে আপনি প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাবেন।
বাঁকুড়ার এই অঞ্চলে ভ্রমণ করতে গেলে, সেখানকার স্থানীয় জীবনধারা এবং সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। বেশ কিছু স্থানীয় বাজার এবং হাট-বাজারে আপনি স্থানীয় হস্তশিল্প কিনতে পারেন। এছাড়াও, বাঁকুড়ার রাস্তাগুলি বেশ উন্নত, তবে পাহাড়ি এলাকাগুলি শরীরের জন্য কিছুটা কষ্টকর হতে পারে। বসন্তে পলাশের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সেরা সময় হল ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁকুড়ার এই জায়গাগুলি নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা গন্তব্য।