Dementia Risk: কোলেস্টেরলের কারিকুরিতেই লুকিয়ে ‘অ্যালজাইমার্সে’র ভয়ঙ্কর বিপদ?

বাড়িতে বয়স্ক সদস্য থাকলে, অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করে দেখবেন যে মাঝেমধ্যেই ছোটখাটো বিষয় ভুলে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে তাঁদের। আপনি কী নিজেও পঞ্চান্ন কিংবা ষাটোর্ধ? ঠান্ডা…

Abnormal Cholesterol Metabolism Identified as Key Risk Factor for Dementia

বাড়িতে বয়স্ক সদস্য থাকলে, অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করে দেখবেন যে মাঝেমধ্যেই ছোটখাটো বিষয় ভুলে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে তাঁদের। আপনি কী নিজেও পঞ্চান্ন কিংবা ষাটোর্ধ? ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন, মনে থাকা উচিত, সাধারণ এমন ব্যাপারও বেমালুম ভুলে যাওয়ার সমস্যা হয় মাঝে মধ্যেই। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি (Dementia Risk) একটু নড়বড়ে হওয়াটা সাধারণ ব্যাপার হলেও, সমস্যাটা তখন জটিল হয়, যখন বারংবার এই ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটা ফিরে ফিরে আসে! ডাক্তারি পরিভাষায় একেই বলে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ (Dementia)।

বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ফিনল্যান্ডে, তারপরে যে দেশটি রয়েছে তার নাম আমেরিকা। ভারতবর্ষে এই ধরনের রোগীর সংখ্যা কম হলেও, বছর বছর এই সংখ্যাটা কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে! আর সেই কারণেই পরিস্থিতি আরও আশঙ্কাজনক হয়ে উঠছে চিকিৎসাবিদদের কাছে !

   

সম্প্রতি একটি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য ডাক্তারদের কপালের ভাঁজ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিমেনশিয়ার সাথে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাবৃদ্ধির সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে এই গবেষণায়। এমনিতেই প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩ জন ভারতীয় রক্তে অস্বাভাবিক কোলেস্টেরলের মাত্রার সমস্যায় ভোগেন। আর চল্লিশোর্ধ বাঙ্গালীদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি এই রোগের শিকার! আবার লক্ষনীয়ভাবে গ্রামাঞ্চলের থেকে শহরাঞ্চলে এই মাত্রাটা অপেক্ষাকৃত অনেকটাই বেশি!

কিন্তু কেন হয় কোলেস্টেরলের এই সমস্যা?কোলেস্টরেল হল ফ্যাট বা লিপিড এবং প্রোটিনের একটি জটিল যৌগ অর্থাৎ লাইপো প্রোটিন। এই কোলেস্টেরলের আবার অনেকগুলি উপাদান আছে। যার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ‘হাই ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন’ বা ‘এইচডিএল’ এবং ‘লো ডেনসিটি লাইপো প্রোটিন’ বা ‘এলডিএল’।

এছাড়াও আছে টোটাল কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড। এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটির স্বাভাবিক মাত্রা বেড়ে গেলে বা কমে গেলে, ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হয়। একেই হাই কোলেস্টরেল বা ডাক্তারি পরিভাষায় ডিসলিপিডিমিয়া বলা হয়।

সাধারণত খাদ্যাভাস, লাইফ স্টাইলের ধরন, শারীরিক পরিশ্রমে অনীহা, মিষ্টি ভাজাভুজি এবং ময়দাজাত খাবার বেশি খাওয়ার প্রবণতা, অনিয়ন্ত্রিত ধূমপান মদ্যপান এবং অতিরিক্ত ওজন কোলেস্টেরলের সমস্যার ক্ষেত্রে প্রাথমিক কারণ হিসেবে ধরা হয়। তবে যাদের বংশগতভাবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওবিসিটির সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে কোলেস্টেরলের সমস্যায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি।

কিন্তু স্মৃতিশক্তির সাথে কোলেস্টেরলের সম্পর্কটা ঠিক কেমন? সাধারণভাবে বললে বলা যায় যে, আমাদের শরীরের কোনো একটি সমস্যা শরীরের অন্য কোনো অংশকে কোনও না কোনও ভাবে প্রভাবিত করেই। এতকাল ধরে ধারণা ছিল যে, কোলেস্টেরলের সমস্যা শুধু আমাদের হার্ট অ্যাটাক বা রক্তবাহী ধমনীর উপরে নেতিবাচক প্রভাবই ফেলে।

কিন্তু বছরখানেক আগে আমেরিকার ‘মেয়ো ক্লিনিকে’ হওয়া একটি গবেষণার ফলাফল ছাপা হয়েছে নিউরোলজি নামে একটি প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নালে। সেখানে গবেষকরা একটি নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। যাদের কোলেস্টরেল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের লেভেল নিয়মিত উঠানামা করে, বয়স কালে তাদের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের সম্ভাবনা অন্যান্যদের থেকে ২৩ শতাংশ বেশি!

প্রায় ১৩ বছর ধরে, ১১,৫৭১ জন মানুষের উপরে এই গবেষণা চালানো হয়েছে। তারই হিসাবে বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ডিমেনসিয়া বা অ্যালজাইমার্সে কোলেস্টেরলের ভূমিকা যথেষ্টই রয়েছে। কিন্তু কিভাবে কোলেস্টরেল এই অপকর্মটি করে, সেটা জানার জন্য আরও গবেষণা দরকার।

তাহলে কিভাবে আটকাবেন এই কোলেস্টেরলের সমস্যা? সাধারণত এই সমস্যার সরাসরি কোন উপসর্গ দেখা যায় না। তাই ৪৫ বছর বয়সের পর থেকে অন্তত বছরে একবার করে হলেও, লিপিড প্রোফাইল চেক করানো খুব জরুরী। আর যদি পরিবারের ইতিহাসে এরকম রোগী থাকে, তাহলে ৩৫ বছরের পর থেকেই, সচেতনতা এবং পরীক্ষা চালু করা জরুরি।

সব থেকে বড় কথা, লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতেই হবে। শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম, পরিমিত স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরী। ময়দায় তৈরি খাবার, জাঙ্ক ফুড, বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড, ঘি মাখন, রেড মিট, এইসব যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে পারলেই ভালো।

একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন, আপনি চাইলে আপনার কোলেস্টেরলের পরিমাণটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কিন্তু ডিমেনশিয়া বা অ্যালজাইমার্স এর মত রোগের কোন সমাধান কিন্তু নেই, ফলে আপনি যদি কোলেস্টেরলের ব্যাপারটাকে হালকা ভাবে নেন, তাহলে কিন্তু আপনার শিয়রে স্মৃতিভ্রংশের শমন অপেক্ষা করছে। অতএব সময় থাকতেই সাবধান হোন।