বাংলায় শীতের কামব্যাক! জানুন শীতের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

West Bengal weather forecast: শীতের প্রকোপ এবার কিছুটা হলেও কমেছে, তবে শীত এখনও বাংলার বেশ কিছু অঞ্চলে পরিস্কারভাবে তার উপস্থিতি জানিয়ে যাচ্ছে। একদিকে যেমন কলকাতা…

A weather forecast scene in Kolkata city, West Bengal, during winter

West Bengal weather forecast: শীতের প্রকোপ এবার কিছুটা হলেও কমেছে, তবে শীত এখনও বাংলার বেশ কিছু অঞ্চলে পরিস্কারভাবে তার উপস্থিতি জানিয়ে যাচ্ছে। একদিকে যেমন কলকাতা শহরে ও তার আশেপাশের অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের নানা অঞ্চলে শীতের কামব্যাক হতে যাচ্ছে। আসুন জেনে নিই কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলের শীতের পরিস্থিতি এবং আগামী দিনের আবহাওয়া পূর্বাভাস।

কলকাতায় শীতের সাময়িক অবসর
কলকাতা শহরের মধ্যে গত কিছুদিন ধরে শীতের অনুভূতি ছিল বেশ তীব্র। তবে পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ ২২ জানুয়ারি থেকে শহরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩-১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বেড়ে ১৪-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে দাঁড়িয়েছে। এটি একদিকে যেমন শীতের কমপক্ষে কিছুটা আরাম দিলেও, একই সঙ্গে পূর্বাভাস দিচ্ছে যে শীত কিন্তু এখনও বিদায় নেয়নি।

   

এই পরিবর্তনের কারণ হল কলকাতা ও আশেপাশের অঞ্চলে ঘন কুয়াশার আগমন। আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের ওপর ঘন কুয়াশা রাজত্ব করবে এবং এর ফলে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে গিয়ে সড়কপথে যান চলাচলেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গে শীতের ফের কামব্যাক
শীতের অনুভূতি ফের ফিরে আসতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। ২৬ জানুয়ারির পর কুয়াশা দূর হয়ে গেলে শীত আবার নতুনভাবে ধরা দিতে পারে। যেহেতু শীতকাল এখনো বিদায় নেয়নি, তাই এই সপ্তাহের শেষের দিকে কিংবা পরের সপ্তাহের শুরুতে রাজ্যের অধিকাংশ জায়গায় তাপমাত্রা আবার নেমে আসবে। বিশেষত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা যেমন বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নেমে যেতে পারে।

কুয়াশা ও শীতের ক্ষতিকর প্রভাব
এই সময়ের ঘন কুয়াশা একদিকে যেমন শীতের অনুভূতি বাড়িয়ে তোলে, অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যায়, যার ফলে সড়কপথে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে রাতে বা ভোরবেলা ভ্রমণ করা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও কুয়াশা ও শীতের ফলস্বরূপ শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, ঠাণ্ডা ও কুয়াশার মধ্যে চলাচল করার সময় সতর্ক থাকা উচিত এবং বাড়ির বাইরে বের হওয়ার আগে পর্যাপ্ত কাপড় পরিধান করতে হবে।

ফেব্রুয়ারি মাসে তাপমাত্রার পরিবর্তন
তবে, শীত কিন্তু অত সহজে বিদায় নেবে না। জানুয়ারির শেষের দিকে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে, বিশেষ করে সরস্বতী পুজোর পর রাজ্যের তাপমাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হতে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেব্রুয়ারির শুরুতে রাজ্যের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। এ ছাড়া, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রেকর্ড হতে পারে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে শীতের অনুভূতি একদম শেষ হয়ে যাবে এবং রাজ্যের আবহাওয়া হবে উষ্ণ।

এই সময়ে পশ্চিম ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে, যেমন মুম্বাই, গোয়া এবং কেরালায় যে ধরনের উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে, তেমনই পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গেও তৈরি হতে পারে। সুতরাং, শীত বিদায় নিলেও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে, তা একধরণের গ্রীষ্মের অনুভূতি তৈরি করতে পারে।

সামগ্রিক পূর্বাভাস
পূর্বাভাস অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রার হেরফের চলবে। রাজ্যের উত্তরের জেলা যেমন আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি এলাকার মধ্যে তাপমাত্রার আরও হ্রাস হতে পারে। এখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নেমে আসতে পারে। পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায়ও কুয়াশা এবং শীতের উপস্থিতি থাকবে।

এছাড়া, পরবর্তী এক সপ্তাহে রাজ্যে বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ের কাছাকাছি এলাকায় কুয়াশা এবং শীতের প্রভাব বেশি দেখা যাবে। ফলে, এই অঞ্চলে ভ্রমণকারীদের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষত গঙ্গার পাড়, সুন্দরবন এবং জঙ্গলের অঞ্চলে কুয়াশার মধ্যে চলাচল করা বিপজ্জনক হতে পারে।

এই শীতকাল আরও কিছুদিন পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ী হবে, কিন্তু ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে তাপমাত্রার পরিবর্তন হবে। শীতের উত্তাপ থেকে গরমের গালিচা ছড়িয়ে পড়বে। তবে এখনই শীতের বিদায়ের ঘণ্টা বাজেনি, তাই সাবধানে চলাফেরা করা উচিত। এখনি কুয়াশা এবং ঠাণ্ডা হাওয়া থেকে সতর্ক থাকুন এবং পরবর্তী কিছুদিন শীতের বাহুল্য উপভোগ করতে থাকুন।